স্বাভাবিক প্রসবের ৭৮ শতাংশই হয় মিডওয়াইফদের মাধ্যমে
দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমলেও প্রতি ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছে ১৫৬ জন মা। প্রতিবছর গর্ভাবস্থা এবং প্রসবজনিত জটিলতায় ৪ হাজারের বেশি মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এটি ৭০ এ নামিয়ে আনার চেষ্টা হলেও, অর্জনে এখনও বাংলাদেশ অনেক দূরে। তাছাড়া দেশে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক প্রসবের ৭৮ শতাংশই হচ্ছে মিডওয়াইফদের হাতে।
ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইফ’স (আইসিএম) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। দিন যত যাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব তাপপ্রবাহ, বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যা উল্লেখযোগ্যভাবে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘মিডওয়াইফ, জলবায়ু সংকটে অপরিহার্য জনশক্তি’ এই প্রতিপাদ্যে সারাবিশ্বের মতো রোববার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস-২০২৪।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মায়েদের গর্ভাবস্থা, প্রসববেদনা ও প্রসবের শুরুর অবস্থায় পরামর্শ ও নবজাতকের যত্ন নিতে সহায়তা করেন একজন মিডওয়াইফ। প্রসূতির স্বাস্থ্য ও শিশুর পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শ দেন। মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য মিডওয়াইফ ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকেন। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে মিডওয়াইফরা বড় ভূমিকা রাখেন। তাই সরকারি-বেসরকারিভাবে মিডওয়াইফদের ওপরে বিনিয়োগ করা, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া এবং তাদের পূর্ণ পরিসরে অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া জরুরি। এতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে সহায়ক হবে।
আরও পড়ুন
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মিডওয়াইফারি দিবস পালিত
রোগীদের সেবা করে ‘সদকায়ে জারিয়া’ অর্জন করছেন নার্সরা
বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির সভাপতি আসমা খাতুন বলেন, দেশে ২০২০ সালে প্রসবকালে প্রতি লাখে মাতৃ মৃত্যু ছিল ১৬৩ জন। কিন্তু জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল-মৃত্যুহার প্রতি লাখে ১২১ জনে নামিয়ে আনা। এভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি লাখে ৮৫ জনে নামিয়ে আনা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই হার ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে।
প্রসূতি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের’ (ওজিএসবি) চিকিৎসকরা জানান, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনও অনেক কাজ বাকি। কারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় মিডওয়াইফের সংখ্যা কম। সব হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজের উপযুক্ত পরিবেশও নেই। তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। এখন্র মিডওয়াইফদের অনেকে নার্স ভাবেন। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাও মিডওয়াইফদের কার্যপরিধি সম্পর্কে খুবই কম জানেন।
বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস) সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন, দেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন করা মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন সাব সেন্টারে তিন হাজার মিডওয়াইফ পদ থাকলেও প্রায় ২ হাজার ৫৫৭ জন মিডওয়াইফ কাজ করছেন। সেবাগ্রহীতার তুলনায় মিডওয়াইফদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় সেবাদান ব্যহত হচ্ছে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দ্রুত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া জরুরি। গত বছর চারটি কলেজে মাত্র ২০টি করে মোট ৮০টি সিটে মিডওয়াইফরা বিএসসি-ইন-মিডওয়াইফারির সুযোগ পেয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন
আস্থার সংকটে অনেকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যান: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ভাতা দাবিতে ইন্টার্ন নার্সদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের আড়াই হাজারের কিছু বেশি মিডওয়াইফ রয়েছে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ঘাটতি পূরণে ৫ হাজার পদ সৃষ্টির আবেদন করা হয়েছিল। নানা জটিলতার কারণে ৪০১ জনের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে এরই মধ্যে ৩ হাজার নার্স নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যেই নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হবে। তখন সংকট কমে যাবে।
এএএম/এসএনআর/এমএস