‘অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণে বিশ্বে বছরে ২০ লাখ মানুষ মারা যায়’
অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া প্রায় দুই কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। খাদ্যাভ্যাসে সোডিয়াম কম গ্রহণে এ সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এজন্য লবণ গ্রহণের মাত্রা কমানোর মাধ্যমে তা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর হলিডে ইন হোটেলে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস (আরটিএসএল) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
আরটিএসএলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ডা. টম ফ্রিইডেন বলেন, অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণের ফলে বিশ্বে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর চারটিই হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা হ্রাসের মাধ্যমে হৃদরোগসহ উচ্চ রক্তচাপের জটিলতাসমূহ বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ এবং বহু অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সরকারের স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ৩০ শতাংশ সোডিয়াম গ্রহণ হ্রাসের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আদর্শ সুযোগ রয়েছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ৫ গ্রামের প্রায় দ্বিগুণ। এই লবণের একটি বড় অংশ আসে প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার থেকে।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ প্যাকেটজাত খাবারে অতিমাত্রায় লবণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা হৃদরোগসহ অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
একই সঙ্গে খাবারে অতিরিক্ত লবণ প্রতিরোধে প্যাকেটের সামনে সতর্কতা লেবেল এবং কোন খাবারে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লবণ ব্যবহার করা যাবে সেই সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সরকার খাবারে সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বয়ে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে একটি জাতীয় কৌশল ও রোডম্যাপ প্রণয়নের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এর মাধ্যমে হৃদরোগসহ উচ্চ রক্তচাপের অন্যান্য জটিলতা প্রতিরোধের মাধ্যমে প্রতিবছর বহু অকালমৃত্যু হ্রাস পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. সাধনা ভগওয়াত, রিজলভ টু সেইভ লাইভসের প্রতিনিধি লিন্ডসে স্টিল, ও নোরা আব্দেল গাওয়াদ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক স্কুল অব পাবলিক হেলথের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এএএম/জেডএইচ/জেআইএম