ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার যথাসময়ে পদক্ষেপ নেয়নি, মানুষও ছিল অসচেতন
রোগতত্ত্ববিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার যেমন শুরুতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি তেমন সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো সচেতনতা বা ভয় পরিলক্ষিত হয়নি। এ কারণে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে (নিপসম) এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন। এডিস মশার বিশেষত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এডিস একদিন কামড়ালে ৪ দিন পর আবার কামড়ায়। একটি এডিস মশা যদি ৫০ দিন বেঁচে থাকে, তাহলে তার লাইফটাইমে মোট ১০ বার কামড়ায়।
মোশতাক হোসেন বলেন, মে, জুন, জুলাই-এ তিন মাসে এডিসের প্রজনন হার অনেক বেশি। এ সময়ে বৃষ্টিও বেশি হয়। কাজেই আমরা যদি মশা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে এ সময়ের আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করতে হবে। কিন্তু আমরা সময় মতো যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারিনি, ডেঙ্গু সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুরোগী ৩ লাখ ছাড়ালো
আইইডিসিআরের আরেক সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলমগীর বলেন, করোনার সময় থেকে আমরা কমিউনিটি এঙ্গেজমেন্টের বিষয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ বিষয়টাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও আমাদের কী কী করতে হবে আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি না। এখানেই হচ্ছে আমাদের মূল সমস্যা। আমি আজ পর্যন্ত জানি না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কোনো ধরনের টাস্কফোর্স কমিটি হয়েছে কি না। এক-দুইটা টেকনিক্যাল কমিটি হয়েছে, যার সর্বমোট মিটিং হয়েছে মাত্র তিনটা।
তিনি বলেন, এত বড় একটা আউটব্রেক, ১৫০০ জনের অধিক মানুষ মারা গেলো। প্রতিদিন ডাবল ডিজিটের মানুষ মারা গেলো, অথচ সেটা নিয়ে আমরা কোনোদিন ইমারজেন্সি একটা মিটিং ডাকিনি। এ বিষয়গুলো আমাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) ডা. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুই আমরা প্রত্যাশা করি না। যার একমাত্র আয়-রোজগারের মানুষটি মারা যায়, তারাই একমাত্র ভয়াবহতা বুঝতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে কাজ করছি, আমাদেরও যথেষ্ট গ্যাপ রয়েছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা আলোচনার টেবিলেই আটকে আছি। ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে। হলরুম-সেমিনারে বসে শুধু গবেষণা আর বক্তব্য দিলেই হবে না।
ডেঙ্গুতে হাসপাতালগুলোতে নানা সংকট প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, যখন গণমাধ্যমসহ সব জায়গায় স্যালাইনসহ সংকট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, আমি তখন ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছি। যে সমস্যাটা পেয়েছি সেটি হলো, আমাদের সরবরাহ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই নতুন করে পাওয়ার ব্যাপারে আমরা সক্রিয় হয়েছি। কিন্তু একটা বিষয় আমাদের মাথায় রাখা উচিত। লজিস্টিক সাপোর্ট ও সিস্টেমের কারণে আমাদের সরবরাহ কার্যক্রম অনেক সময় ব্যাহত হতে পারে। এজন্য আমরা যা ব্যবহার করবো, সেখান থেকে অন্তত ১০ শতাংশ সব সময় নিজের হাতে স্টক রাখতে হবে।
এএএম/এমএইচআর/এমএস