কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা

যেভাবে মিলবে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবা

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৫ এএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিশেষজ্ঞ আউটডোর সেবা। এরপর বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু হওয়ার পর এ সেবার পরিধি আরও বেড়েছে। বর্তমানে সকাল ও বিকেল- দুই ধাপে নেওয়া যায় এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা। প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী সকালে ও বিকেলে হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নেন। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে কোনো কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচারও হচ্ছে কিছু ক্রিটিক্যাল রোগীর।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জটিল সব রোগের চিকিৎসা, উন্নতমানের চিকিৎসা এবং সরকারি খরচে বেসরকারি হাসপাতালের মানের চিকিৎসা দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। যদিও উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ১১ মাসে হাসপাতালের পুরো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধনের শুরু থেকেই চালু হয় আউটডোরে বিশেষজ্ঞ সেবা।

আরও পড়ুন: প্রস্তুত দেশের ১ম সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মিলবে যেসব সুবিধা

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দুই শিফটে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও বিকেলের তুলনায় সকালে রোগীর উপস্থিতি একটু বেশি থাকে। তবে চলমান অবরোধের কারণে রোগী কিছুটা কমেছে। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী থাকলেও বর্তমানে আসছেন ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো। যাদের অধিকাংশই সকালে আসছেন। বিকেলের শিফটে রোগীর সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা কয়েকজন।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সকালে ও বিকেলে দুই শিফটে রোগী দেখেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে রোগী দেখা।

লোকবলের অভাবে হাসপাতালের পুরো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এখনো রোগীদের সংখ্যা আশানুরূপ নয়। শুধু লোকবল নয়, বিশেষায়িত এ হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা না থাকাও রোগী কম হওয়ার অন্যতম কারণ।

যেভাবে নেওয়া যাবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আউটডোর সেবা
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সকালে ও বিকেলে দুই শিফটে রোগী দেখেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ও বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে রোগী দেখা। এ সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হাসপাতালের রিসিপশন থেকে নিতে হবে সিরিয়াল। সকালের শিফটের সিরিয়াল নিতে সকাল ৮টার মধ্যে কাটতে হবে টিকিট। বিকেলের শিফটের জন্য দুপুর দেড়টার মধ্যে টিকিট কেটে সিরিয়াল নিতে হবে।

আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু

প্রতি বিভাগে একেক শিফটে ১০ থেকে ১৫ জন রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। তবে রোগীর চাপ বেশি থাকলে মাঝেমধ্যে চিকিৎসকরা এর চেয়ে বেশি রোগী দেখেন। আবার সিরিয়াল খালি থাকা সাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ের পরে এসে টিকিট কাটলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন রোগীরা। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনেই আছে তথ্য সেবা কেন্দ্র। সেখান থেকে হাসপাতালের সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে।

যেভাবে মিলবে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবা

আউটডোরে চিকিৎসকের ভিজিট কত
হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক- এই তিনটি পর্যায়ের চিকিৎসকের টিকিটের খরচ আলাদা। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপকের ভিজিট সকালে ৩০০ ও বিকেলে ৫০০ টাকা। সহযোগী অধ্যাপকের ভিজিট সকালে ৪০০ ও বিকেলে ৭০০ টাকা। অধ্যাপকের সকালের ভিজিট ৬০০ ও বিকেলে এক হাজার টাকা।

বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত এ হাসপাতাল ভাগ করা হয়েছে পাঁচটি কেন্দ্রে। এগুলো হলো- জরুরি চিকিৎসা ও ট্রমা কেন্দ্র, কিডনি রোগ ও প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও স্ট্রোক কেন্দ্র এবং হেপাটোবিলিয়ারি, পেনক্রিয়াটিকস, হেপাটোলজি ও যকৃত প্রতিস্থাপন কেন্দ্র।

আরও পড়ুন: ভাই পরিচয়ে কিডনি দান, পরে জানা গেলো রহস্য

বর্তমানে এই পাঁচ কেন্দ্রের আওতায় ১৫ বিভাগের বহির্বিভাগ চালু আছে। সেগুলো হলো- প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, শিশু স্বাস্থ্য, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, রেস্পিরেটরি মেডিসিন, হৃদরোগ, কার্ডিয়াক সার্জারি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটোলজি, হেপাটোবিলিয়ারি ও পেনক্রিয়াটিকস, অর্থপেডিকস ও ট্রমা, চক্ষুরোগ, সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং নিউরোসার্জারি।

হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপকের ভিজিট সকালে ৩০০ ও বিকেলে ৫০০ টাকা। সহযোগী অধ্যাপকের ভিজিট সকালে ৪০০ ও বিকেলে ৭০০ টাকা। অধ্যাপকের সকালের ভিজিট ৬০০ ও বিকেলে এক হাজার টাকা।

এরই মধ্যে চালু হওয়া এসব বিভাগের মধ্যে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সবচেয়ে বেশি রোগী আসছেন গ্যাস্ট্রোলিভার, নিউরোলজি ও গাইনোলজি বিভাগে।

যেভাবে মিলবে বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবা

কথা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা রফিকুল আলমের সঙ্গে। বিকেলের শিফটে নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন তিনি। এর আগে সকালে বিএসএমএমইউয়ের আউটডোরে সিরিয়াল দিয়ে নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক দেখান। তবে সেখান থেকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দিয়ে এখানে পাঠানো হয়। ওইদিন বিকেলের শিফট শুরুর দিকে এ বিভাগে রোগী না থাকায় চিকিৎসক চলে যান।

আরও পড়ুন: বিএসএমএমইউ উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য-দুর্নীতির অভিযোগ

অনেকটা হতাশ হয়ে জাগো নিউজকে রফিকুল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছি। হঠাৎ করেই এক হাত অবশ হয়ে গেছে। অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই চিকিৎকের কাছে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’

হাসপাতালের পুরো কার্যক্রম কবে শুরু হবে- এমন প্রশ্নে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা কার্যক্রম চলমান। প্রতিদিনই রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। রোগীরা এখানে কম খরচে বিশ্বমানের সেবা পাচ্ছেন। আমরা আমাদের খরচ কমই রাখবো। হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান। এছাড়া নতুন নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। শিগগির আমরা পুরো কার্যক্রম চালু করতে পারবো।’

এএএম/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।