আমার আশা ছাড়ো, মেয়েটাকে বাঁচাও: স্বামীকে ডেঙ্গু আক্রান্ত স্ত্রী
আটদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন জাহানারা আক্তার (৩৪)। এই সময়ের মধ্যে বুকের দুধ পান করিয়েছেন ২১ মাস বয়সী মেয়ে উম্মে জাফরিনকে। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ডেঙ্গু টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ আসে জাহানারার। এরপর ভয়ে মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন তিনি। একদিন আগে থেকে জ্বর মেয়েরও। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) শিশু জাফরিনেরও ডেঙ্গু পজিটিভ।
স্ত্রী-মেয়ে দুজনের অসুস্থতায় বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শান্ত। হাতে টাকা নেই। স্ত্রী-সন্তানকে ভালো হাসপাতালে নেওয়ারও উপায় নেই তার। জাহানারা স্বামীকে জোর করে ছোট্ট মেয়েকে হাসপাতালে পাঠান।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অষ্টম তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সন্তানের পাশে বসে এসব তথ্য জানান শান্ত খান।
শান্ত খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওর (জাফরিন) মা বললো- আমার আশা ছাড়ো, যা হয় হবে। তুমি আমার মেয়েটাকে অন্তত বাঁচাও। ওকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যাও। স্ত্রীর কথা আর ফেলতে পারিনি।’ তবে স্ত্রীকে একা বাসায় রেখে এসে পেরেশান শান্ত।
শান্ত বলেন, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে মেয়েকে নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন একটা স্যালাইন ও একটা ইনজেকশন দিতে হচ্ছে এ বাচ্চাকে। বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে খরচ হচ্ছে ১২০ টাকা এবং ইনজেকশন নিচ্ছে ১৫০ টাকা। গুড়ো দুধ এনে ফিডারে গুলিয়ে খাওয়াচ্ছি। নিচে থেকে সিদ্ধ ডিম কিনে আনলে একটু খাচ্ছে ও। দুদিন আমার কোনো খাওয়া নেই।’
শান্ত খানের মতোই হাফেজ সোলাইমানের স্ত্রী ও ছেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত। স্ত্রীকে তৃতীয় তলায় নারী ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন তিনি। ৬ বছরের ছেলে জোবায়ের আহমেদও মায়ের বেডেই। ছেলের গায়ে ১০৩ জ্বর। স্ত্রীর জ্বর না থাকলেও ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।
হাফেজ সোলাইমান আরবি টিউটর। বাসায় গিয়ে শিশুদের আরবি শেখান। কয়েকটা টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। সঞ্চয় বলে কিছু নেই। হঠাৎ স্ত্রী-সন্তানের এমন অসুস্থতায় চরম বিপাকে পড়েছেন তিনিও।
হাফেজ সোলাইমান বলেন, তার বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই গ্রামে থাকেন। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি থাকেন মান্ডা এলাকায়। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কঠিন এ সময় কীভাবে উতরাবেন তা নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই সোলাইমানের।
এদিকে, মুগদা মেডিকেলে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩০৯ জন। চলতি বছর মুগদা হাসপাতালে ভর্তি ১১৩ জন ডেঙ্গুরোগী মারা গেছেন। আর ভর্তি হয়েছেন সর্বমোট ৯ হাজার ৩৭২ জন। তবে গত দুদিন এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি।
এএএইচ/এমএএইচ/এমএস