ডেঙ্গু আক্রান্ত ভাইয়ের টেস্ট রিপোর্ট পেতে ছোট্ট হুমাইরার ‘যুদ্ধ’

আল-আমিন হাসান আদিব
আল-আমিন হাসান আদিব আল-আমিন হাসান আদিব , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৭ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
টোকেন হাতে রিপোর্ট পেতে অপেক্ষা করছে হুমাইরা/ ছবি- জাগো নিউজ

তিন বছরের শিশু হুমায়ন কবির। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৬ দিন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। প্রতিদিন তার টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়ে। সকালে টেস্টের জন্য নমুনা (রক্ত) দিলে সন্ধ্যায় মেলে রিপোর্ট। গত ৪ দিন হাসপাতালের কাউন্টার থেকে ছোট ভাই হুমায়নের টেস্ট রিপোর্ট নেয় ১০ বছরের হুমাইরা। আজও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট নিতে হয়েছে তাকে। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করে রিপোর্ট হাতে পেয়েই ভাইয়ের বেডের দিকে ছুটতে দেখা গেলো হুমাইরাকে।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৬টার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় রেডিওলজি রিপোর্ট সেন্টারে দেখা যায় এমন দৃশ্য।

আরও পড়ুন: রাতেও হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর ভিড়

এদিন বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় রেডিওলজি রিপোর্ট সেন্টারে সামনে হুমাইরাকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছোট্ট হুমাইরা রিপোর্টের টোকেন হাতে একবার বসছে, তো আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। কখনও মেঝেতে পা মেলে বসে পড়ছে শিশুটি। হুমাইরার সামনে পেছনের সবাই বয়স্ক। লাইনে শুধু হুমাইরায় একমাত্র শিশু।

jagonews24.com

কাছে গিয়ে জানতে চাইলে হুমাইরা জানায়, ‘ভাইটা খালি কানতাছে। মা ওকে রাইখ্যা আসতে পারে না। প্রতিদিন আমিই রিপোর্ট লইয়া যাই। ৪টায় মা আমারে এখানে আইতে কয়। আমি আইয়া লাইন খাঁড়াই।’

বাবা কোথায়, উনি আসেন নি- এমন প্রশ্নে সে বলেন, ‘আব্বায় তো আইতে পারে না হাসপাতালে। একদিন আইছিল। কাম-কাজ করে। সারাদিন কাউন্টারে বসা লাগে। ভোরে উইঠা আয়ে, বাসায় যাইগা রাইত ১২টায়। হাসপাতালে আইবো কখন?’

আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ার ৯ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

এদিকে, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিপোর্ট দেওয়া হলেও এদিন ১৫ মিনিট আগে থেকে তা শুরু হয়। কারণ ৪টা থেকেই অনেকে রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চাপ সামাল দিতে আগেভাগেই রিপোর্ট দেওয়া শুরুর কথা জানান ওই কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা স্টাফ রমিজা খাতুন।

jagonews24.com

জাগো নিউজকে রমিজা খাতুন বলেন, ‘প্রতিদিন ৬০০-৭০০ নমুনা টেস্ট করানো হয়। ভোর ৫টা থেকে রক্ত দিতে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। চাপ সামলাতে স্টাফদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকালের দিকে ১১-১২টার মধ্যে যারা নমুনা দেন, তাদের রিপোর্ট সন্ধ্যার দিকে দেওয়া হয়। যারা ১২টারও পরে নমুনা দেন, তাদের পরদিন রিপোর্ট দেই আমরা।’

হুমাইরাকে গত দুইদিন তিনি খেয়াল করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘মেয়েটা এসে রিপোর্ট নিয়ে যায়। প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে- ওর ভাইয়ের ডেঙ্গু সারছে কি না। অর্থাৎ নেগেটিভ হয়েছে কি না।’

এদিকে, হুমাইরার ভাইয়ের খোঁজে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অষ্টম তলা শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত ছোট্ট হুমায়নকে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন তার মা আলিয়া খাতুন। হুমায়ন পানি খেতে না চাওয়ায় তার মা বলছেন, ‘পানি খা, নইলে তোর আব্বায় আইবো কইলাম?’

jagonews24.com

মা আলিয়া জানান, হুমাইরার বাবা আবুল কালাম শ্যামলিতে একটি বাসের কাউন্টারে কাজ করেন। তাদের বাড়ি ডেমরায়। হুমাইরা ডেমরার তাহেরমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

আরও পড়ুন: নিম্নমানের মশার কয়েলে সয়লাব বাজার, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের ওয়ার্ড। অষ্টম তলায় শিশু এবং নবম তলায় পুরুষদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ হাসপাতালে মোট বেডের সংখ্যা ৫০০টি। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকের তথ্যানুযায়ী- এ হাসপাতালে শুধু ডেঙ্গুরোগীই ভর্তি রয়েছেন ৩৪৬ জন। তাদের মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৯৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৮৭ জন। তবে এ সময়ে মুগদা মেডিকেলে ডেঙ্গুতে কেউ মারা যায়নি। রাতে রোগী আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা হাসপাতালের কর্মীদের।

এএএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।