বিএসএমএমইউ উপাচার্য
রোগীর রক্ত লাগবে কি না তা নির্ধারণ করবেন চিকিৎসক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রোগীর রক্ত দিতে হবে কি না সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। সাধারণ মানুষের ধারণা, প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলে রক্ত দেওয়া লাগে। এজন্য প্লাটিলেট কমলে তারা চিকিৎসককে রক্ত দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ, কোনো অবস্থায় চিকিৎসা প্রটোকল ভাঙা যাবে না। প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বিএসএমএমইউয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে।
উপাচার্য বলেন, বিএসএমএমইউ ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় দেশ সেরা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০০ প্রাপ্ত বয়স্ক ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আমাদের শিশু বিভাগে ২০০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের সবাই সুস্থ হয়েছে। আমাদের সেবার মান আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে, যার প্রশংসা দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা করছেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এডিস নিধনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এনজিও কর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি পালন করা উচিত।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা শুধু যে মেডিসিনি বিভাগের চিকিৎসকরা করবেন এমন নয়। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের এতে সম্পৃৃক্ত হতে হবে। ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসায় ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে যথাযথ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওভার ফ্লুইড এবং ফ্লুইডের অভাব রোগীর জন্য ক্ষতিকর। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেসা ‘ডাইনামেকিস অব ডেঙ্গু ভাইরাস ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ডেঙ্গু ভ্যাকসিন আপডেটস’, শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহবুব মোতানাব্বি ‘ক্লনিক্যাল প্রেসেন্টেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু: প্যাডিয়াট্রিক অ্যাসপেক্ট’ ও ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বী চৌধুরী ‘ম্যানেজমেন্ট অব ডেঙ্গু ইনফেকশন: টিপস অ্যান্ড ট্যাকটিস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মতামত প্রদান করেন।
সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন রোগীর জ্বর ছেড়ে যায়। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী ৪৮-৭২ ঘণ্টা ডেঙ্গুরোগীর ক্রিটিক্যাল সময়। এটি ডঙ্গু জ্বরের গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসময় রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরের বিপজ্জনক উপসর্গ হলো - অনবরত বমি হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, তীব্র দুর্বলতা অনুভব করা, তীব্র পেটব্যথা, ফুসফুসে পানি জমা, তীব্র শ্বাসকষ্ট হওয়া। গর্ববতী মা, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ডেঙ্গুরোগীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
আরও পড়ুন>> মশা না গেলে ডেঙ্গু রোগীও কমবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ডেঙ্গুরোগীদের প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রত্ত পরিসঞ্চালনের কোনো প্রয়োজন নেই। সঞ্চালন করলে রক্ত (হোল ব্লাড) সঞ্চালন করাই শ্রেয়, প্লাটিলেট নয়। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে, তা রেফার করা ঠিক নয়। ডেঙ্গু শক ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হয়। রক্তচাপ কমের রোগীকে রেফার করলে পথেই রোগী খারাপ হতে পারে। সুতরাং ডেঙ্গু শকের রোগীকে রেফার না করে ওই হাসপাতালেই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর খাবারের বিষয় সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরে আলাদা করে ডাব, পেপে পাতা, পেপে জুস, ড্রাগন ফল বেদানা ইত্যাদি খাওয়ার আলাদা কোনো প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গুরোগী ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সিবিসি টেস্টই যথেষ্ট। সিবিসি টেস্টের মধ্যে নিপ কাউন্ট এবং হেমাটোক্রিট কাউন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হয়। কারণ শিশুদের শরীরে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও যেকোনো সময় শিশুরা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে চলে যেতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের যথাযথ মনিটরিং করতে হবে, যাতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। ডেঙ্গুর তিন ধরনের ভ্যাকসিন আছে। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য অনুমোদিত। জনসাধারণের জন্য ভ্যাকসিন ব্যবহারের পূর্বে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও রেসপিরিটোরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, শিশু অনুষেদর ডিন অধ্যাপক ডা. রনজিৎ রঞ্জন রায়, মেডিকেল টেকোনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল, সেন্ট্রাল সাব কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ্ সবুজ উপস্থিত ছিলেন।
এএএম/ইএ/এমএস