নাক ডাকা ভয়ঙ্কর


প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৬

নাক ডাকা কখনোই স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়। সূচনাতে সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্টের সমস্যায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে। আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা অনিয়ন্ত্রিত ও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

আজ আন্তজার্তিক নিদ্রা দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তে অ্যাসোসিয়েশন অফ সার্জন্স ফর স্লিপ এপনিয়া  বাংলাদেশ (এএসএসএবি) এর উদ্যোগে ‘সুখ নিদ্রা সহজলভ্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞরা এ সব কথা বলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা নাক ডাকেন তাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ বা শ্বাসবন্ধ হওয়ার ঘটনা থাকে। দমবন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়মিতভাবে অল্প সময়ের জন্য হতে থাকে। কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা না করলে হতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। সূচনাতে সেই সমস্যা সাধারণ শারীরিক অস্বস্তি দিয়ে শুরু হলে চূড়ান্ত পরিণতি ভয়াবহ। তবে সব নাক ডাকাই খারাপ নয় বলে তারা মন্তব্য করেন।

এএসএসএবি সভাপতি অধ্যাপক ডা. এস এম খোরশেদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএসএসবি মহাসচিব ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এর নাক, কান, গলা রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ইএনটি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, প্রাক্তন পরিচালক, বিএসএমএমইউ’র অটোল্যারিংগোলজি এন্ড হেড-নেক সার্জারী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ডা. মো. শওকত আলী, অধ্যাপক জহুরুল হক সাচ্চু, অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ডা. সজল আশফাক এবং অজ্ঞানবিদ অধ্যাপক মান্নান প্রমুখ।

sleep-day
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ঘুমের সমস্যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই হতে পারে। বয়সভেদে এর কারণেও ভিন্নতা রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এডিনয়েড ও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত কারণে ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। বড়দের বেলায় নাকের হাড় বাঁকা, বড় আকারের টনসিল, নাকের পলিপ এবং সর্বোপরি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এর মূল কারণ। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ ঘুম কম হওয়ার বিষয়টি সরাসরি বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে মুখ হা করে ঘুমানো কিংবা নাক ডাকাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন। উল্টো নাক ডেকে ঘুমানোকে অধিকাংশ লোকজন গভীর ঘুম বলে মনে করেন।

মূল প্রবন্ধে ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সারাবিশ্বে ১৫% পুরুষ ও ৯% মহিলা নাক ডাকা রোগে ভোগেন। ঘুম বা নিদ্রা খুবই দরকারী একটি বিষয়। কিন্তু নানা কারণে অনেকেরই কাঙ্খিত মাত্রার ঘুম হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে আপনি চাইলেই সহজেই অনিদ্রার কারণ জেনে তার চিকিৎসা নিয়ে সুখের ঘুম ঘুমাতে পারেন।
 
সাধারণভাবে এই স্বাস্থ্য সমস্যার নাম ওএসএ (অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ এপনিয়া) অর্থাৎ নিদ্রাকালীন শ্বাসবদ্ধতা। এ ধরণের সমস্যায় রোগীর রাত্রিকালীন নিয়মিত ঘুম ভালো বা পর্যাপ্ত হয় না, ফলে সারা দিন ঘুমকাতুরে চোখ নিয়ে ঝিমুনিতে কাটে।

তিনি জানান, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘুমের সমস্যা নির্ণয়ে নাক-কান-গলা পর্যবেক্ষণ শেষে স্লিপ স্টাডিসহ অন্য পরীক্ষা করতে হয়। এই সমস্যায় ভোগা বেশিরভাগ রোগীরই ওজন বেশি থাকে, সঙ্গে শ্বাসের পথে বাধাগ্রস্ততা থাকে। কাজেই ওজন কমানোই প্রথম চিকিৎসা; এর বাইরে শ্বাসের পথে বাধা সৃষ্টিকারী অবধারিত সমস্যা থাকলে অপারেশন করে সে বাধা দূর করতে হবে। তবে বাধাজনিত অপারেশনযোগ্য সমস্যা না থাকলে ব্যবহার করা যেতে পারে সিপ্যাপ মেশিন।

সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক খোরশেদ মজুমদার বলেন, নাক ডাকা কখনোই স্বাস্থ্যকর বিষয় নয়। যারা নাক ডাকেন তাদের মধ্যে অনেকেরই ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ বা শ্বাসবন্ধ হওয়ার ঘটনা থাকে। এই দমবন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়মিতভাবে অল্প সময়ের জন্য হতে থাকে। কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা না করলে হতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। সূচনাতে সেই সমস্যা সাধারণ শারীরিক অস্বস্তি দিয়ে শুরু হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেইন স্ট্রোক, হার্টের সমস্যায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারাত্মক পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে। আর আগে থেকেই  ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে। এর বাইরেও এ কারণে কমে যায় উদ্যম, কর্মস্পৃহা। আলোচনা সভার আগে হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে র্যালী রিপোটার্স ইউনিটি অডিটোরিয়ামে শেষ হয়।

এমইউ/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।