ডেঙ্গু নিধনে শাস্তির কোনো বিকল্প নেই: স্বাচিপ সভাপতি
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ডেঙ্গু নিধন ও ডেঙ্গু আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো না মানলে জরিমানাসহ শাস্তির বিধান আরও বাড়ানো উচিত। আপনি যখনই শাস্তির দিকে যাবেন তখনই কিছু কাজ হবে। সুতরাং শাস্তির কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার (২৬ জুলাই) অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা কলেন তিনি। ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ: সচেতনতায় করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে জাগো নিউজ।
ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটা গণমাধ্যমের মাধ্যমে বেশ প্রচারণা হচ্ছে। আমি বেশকিছু জায়গায় দেখেছি, কোনো কিছুতে শৃঙ্খলা আনার জন্য আইনের প্রয়োগটা হলো আসল। আইনের প্রয়োগ হলেই মানুষ খারাপ কাজ বা বেআইনি কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। তাই এ জায়গাগুলোতে আরও বেশি করে জরিমানা করা উচিত। নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা ৪৩ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে শুধু জরিমানার কারণে। সচেতনতাও কাজ করবে।
আরও পড়ুন>> আগামী দুই মাস ডেঙ্গুর জন্য বেশ শঙ্কার: কবিরুল বাশার
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এ চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে আমরা অনেক বিজ্ঞাপন দিয়েছি যে, চিকিৎসকরা বিএমডিসি অনুমোদিত নয় এমন ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না। তারা তাদের ভিজিটিং কার্ড কিংবা সাইনবোর্ডে এগুলো ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। আমরা দেখলাম বারবার লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না। যখনই আমরা শাস্তির দিকে গেলাম তখন কাজ হচ্ছে। ১৫ জনকে আমরা পেলাম বেশ উচ্চপর্যায়ের, তারা পরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন ভবিষ্যতে আর ডিগ্রি ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ আপনি যখনই শাস্তির দিকে যাবেন তখনই কিছু কাজ হবে। সুতরাং শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। নড়চড় করে বেশি মানুষকে বাধ্য করতে পারবেন না। তাই যে জিনিসটি দরকার আমরা এখনো সেই জায়গায় যেতে পারিনি।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে মানুষ মানে কেন। সিঙ্গাপুরে একই অবস্থা, কিন্তু সেখানে আইন প্রয়োগ করে এবং বেশ উচ্চহারে জরিমানা করে। সিঙ্গাপুরে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র দুজন মারা গেছেন। আক্রান্তের সংখ্যাটা তাদের খুব কম ছিল না।
আরও পড়ুন>> পুলিশের ডাম্পিং ডেঙ্গুর বড় প্রজননস্থল: ইকবাল হাবিব
ডেঙ্গু আক্রান্তদের নিয়ম না মানার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে মশারির ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সবাইকে বাধ্য করতে হবে। রাজধানীতে বিদ্যুৎ যায় না বললেই চলে, সেখানেও মশারি ব্যবহার করছেন না কারণ আপনার গরম লাগছে। আপনি কি এটা তুলনা করতে পারেন। আপনি বলছেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি মশারি ব্যবহার করবেন না। কারণ আপনি তো বুঝতে পারছেন যে ডেঙ্গু হলে আমরা মারা যেতে পারি, খারাপ অবস্থায় যেতে পারি। কিছুদিন আগে একজন তরুণ চিকিৎসক মারা গেলেন।
‘আমরা নতুন করে ডেঙ্গুর যে নমুনা দেখছি, তাতে আমাদের একটি নির্দেশনা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটায়ও আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলেছি, সেই নির্দেশনাটা পুনর্বিবেচনা করার দরকার আছে কি না। আমরা মৃত্যুটাকে কমিয়ে আনতে পারি কি না। সিঙ্গাপুরে তো মৃত্যু অনেক কম হচ্ছে। ব্যবস্থাপনায় কোনো পার্থক্য হচ্ছে কি না। আমরা আরও কিছু করতে পারি কি না দেখা উচিত। যেকোনো মৃত্যুই আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। সেটা ঠেকাতে পারলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে।’ যোগ করেন এ চিকিৎসক।
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন মশা মারার দায়িত্বটা তার নয়। এটা যেহেতু তার পার্ট নয়, তাই হয়তো তিনি বলেছেন যে এটা আমার দায়িত্ব নয়। আসলে সমন্বিত উদ্যোগ এখনই নেওয়ার সময়। কারণ এখনই কিন্তু বাড়ার সময় হয়নি। সামনে আরও সময় আছে। তাই এখন যেহেতু ঝুঁকি বেশি আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার।
আরও পড়ুন>> পুলিশের ডাম্পিং ডেঙ্গুর বড় প্রজননস্থল: ইকবাল হাবিব
সবকিছুর জন্য সমন্বয় জরুরি উল্লেখ করে এ চিকিৎসক নেতা বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত যেহেতু সেহেতু এখানে সমন্বিত একটি কমিটি করে দেওয়া উচিত। যাতে মানুষ চিকিৎসা সঠিকভাবে পেতে পারে। রোগ হতে পারে কিন্তু সেটা নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। করোনার সময় এটা আমরা দেখেছি। বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। তাই সমন্বিত উদ্যোগ আমাদের নিতে হবে এবং বেশ জোরালোভাবেই নিতে হবে।
ডেঙ্গুর ভ্যাকসিনের বিষয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর দুটি ভ্যাকসিন রয়েছে। এর মধ্যে কিউভ্যান ভ্যাকসিনটা আমরা নিতে পারি। এটা আমরা নিতে পারি এজন্য যে, এটার তৃতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। বেশ নামকরা কোম্পানি এ ভ্যাকসিনটা বের করেছে। ইউরোপে এরই মধ্যে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলক দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখন এটার জন্য চেষ্টা করা দরকার। পরীক্ষামূলক যেহেতু আছে আমাদের খরচ কম হবে।
ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গবেষণা আমাদের অনেক হয় কিন্তু ক্লিনিক্যাল বিষয়ে খুবই কম হয়। মৌলিক গবেষণা নেই বললেই চলে। আমরা ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে গবেষণার জন্য একটা উদ্যোগ নিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমরা একটি টিম নিয়ে এসেছিলাম। তারাও দেখে খুশি হয়েছিল যে, এত চিকিৎসক গবেষণার জন্য আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন মৌলিক গবেষণার জন্য যত টাকা দরকার তা তিনি দেবেন। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আমাদের নতুন কিছু করতে হবে।
জাগো নিউজের প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে পদকপ্রাপ্ত ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, সরকারি সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাছের খান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপ-পরিচালক (কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট) মাহমুদুল হাসান ও জাগো নিউজের ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক আসিফ আজিজ, প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ রানা, উপ-প্রধান প্রতিবেদক সাঈদ শিপন প্রমুখ।
আরএসএম/ইএ/এএসএম