পুলিশের ডাম্পিং ডেঙ্গুর বড় প্রজননস্থল: ইকবাল হাবিব
‘পুলিশের ডাম্পিং করা গাড়িগুলো ডেঙ্গু প্রজননের সবচেয়ে বড় প্রজননস্থল। ঢাকার প্রায় সব থানার সামনাসামনি গাড়ি ডাম্পিং করা রয়েছে। একটু করে কেরোসিন ঢাললে সেখানে ঠিক হয়ে যায়। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাপ হলে পুলিশ বলেছে, ‘আমরা ইমিডিয়েটলি ব্যবস্থা নিচ্ছি’। তার মানে তারা অনেক দেরি করে ফেলেছে। এতে ডেঙ্গুতে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
বুধবার (২৬ জুলাই) অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ: সচেতনতায় করণীয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে জাগো নিউজ।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রগুলো আজ ডেঙ্গুর মতো জায়গায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এজন্য বলছি, পুরো বিষয়টি পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। গত বছর বা তার আগের বছর ডেঙ্গুর যে পিক পয়েন্ট (নির্দিষ্ট মাস) দেখেছি, এবার অনেক আগেই জানুয়ারিতে ডেঙ্গু দেখলাম। এর মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় ৩০ হাজার লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত দেখলাম। ২০২২ সালে এই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ৪১ হাজারে ছিল। আমরা এই দুই-আড়াই মাসের মধ্যে ৩০ হাজারে টাচ করে ফেলেছি। অবস্থাটা যদি এখনো না বোঝেন, তাহলে এটাকে মহামারি বা অতিমারি যাই বলি তা দিয়ে ঢাকা যাবে না।
আরও পড়ুন: আগামী দুই মাস ডেঙ্গুর জন্য বেশ শঙ্কার: কবিরুল বাশার
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে ইকবাল হাবিব বলেন, ডেঙ্গু ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে আমাদের করণীয় কী। এটি পরিষ্কার এখনই একটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করার। যেখানে সরকারের সব সংস্থার সমন্বয় করা দরকার। যেখানে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে নগর, নগর থেকে দেশে ছড়িয়ে যাবে। এই জায়গায় সত্যিকারের উদ্যোগ কে নেবে, এই ধারণার মধ্য দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল দিয়ে দায়িত্ব এড়ানোর পাঁয়তারা করছি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের প্রস্তুতি আমরা কীভাবে নিচ্ছি, সেটা ভাবতে হবে। আমরা সমন্বয় ছাড়া কোনো ফল পাইনি। সে জায়গাটার অভাব আছে সবার মধ্যে। এছাড়া একটি অহমিকা ভাব আছে।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক বলেন, আমি স্পষ্ট করে বুঝি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের এই কার্যক্রমগুলো সঠিক হচ্ছে কি না তা পরিমাপের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। সিঙ্গাপুরে তারা ন্যাশনাল অথরিটি এজেন্সি করছে। আমাদের যেমন পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। সেটি সিটি করপোরেশন নিলে আরও ভালো হয়। কারণ, সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত।
আরও পড়ুন: ডাম্পিং প্লেসে পুলিশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান
তিনি বলেন, কীটতত্ত্ববিদদের গবেষণায় উঠে এসেছে, এডিস মশা তার প্যাটার্ন পরিবর্তন করেছে। এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পরিবর্তন কোথায় হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে সেটি বের করা দরকার। প্যাটার্ন বুঝে যদি ওষুধ ঠিক করা যায়, তাহলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।
ঢাকার প্রতিটি এলাকাকে ‘ক্লাস্টার ম্যাপিং’ করে মশানিধন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ক্লাস্টার ম্যাপিং করে কলকাতা এডিস মশা নিধনে ভালো ফল পেয়েছে। সিঙ্গাপুরেও ভালো ফল পেয়েছে। আমরা কেন পারব না। এই কার্যক্রমের সঙ্গে বাসিন্দাদের যোগ করতে হবে। যুবক-তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। এই মশা মারতে কাউকে হিরো হওয়ার দরকার নাই। সবাইকে হিরো হতে হবে না। জনগণের চেয়ে বড় হিরো কেউ না।
আরও পড়ুন: ডাম্পিং প্লেসে পুলিশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ডেঙ্গের বিরুদ্ধে সারা বছরই কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, এডিস মশানিধন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য না। এটি একটি বছরব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি অভ্যাসে পরিণত করা দরকার। অন্যথায় এটি পরিবর্তন করা যাবে না। এবার তো কেউ সেপ্টেম্বরের অপেক্ষা নাই। কিন্তু এর মধ্যে ৩০ হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি কি হতে পারে, এটা কেউ কিন্তু ধারণাই করতে পারছি না। তার মানে জানুয়ারি ,ফেব্রুয়ারি, মার্চের মধ্যে যদি স্বস্তি মনে করেন তাহলে তার কিছু হবে না। এ কার্যক্রম বছরব্যাপী পরিচালনা করতে হবে।
বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ডেঙ্গুর জন্য প্রধান দায়ী জানিয়ে বাপার যুগ্ম সম্পাদক বলেন, বিশ্বব্যাপী আমাদের পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে আমরা বিভিন্নভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। ডেঙ্গু তার মাধ্যমে অন্যতম। যদিও এখন ডেঙ্গু সারা পৃথিবীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য করোনার মতো ডেঙ্গুর টিকা কীভাবে আবিষ্কার করা যায়, তা সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন শিশুদের মধ্যে মশার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে একটি বই বের করেছে। শিশুদের সামাজিক সুরক্ষায় প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এই জায়গায় তাদের তৈরি করে ফেলতে পারলে আমরা সামনের দিনগুলোতে এসব রোগের বিষয়ে সাংঘাতিক বড় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি। এই জায়গায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
জাগো নিউজের প্ল্যানিং এডিটর মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে পদকপ্রাপ্ত ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, সরকারি সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাছের খান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির উপ-পরিচালক (কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট) মাহমুদুল হাসান ও জাগো নিউজের ডেপুটি এডিটর ড. হারুন রশীদ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাগো নিউজের অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক আসিফ আজিজ, প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ রানা, উপ-প্রধান প্রতিবেদক সাঈদ শিপন প্রমুখ।
এমএমএ/এমআরএম/এএসএম