ডেঙ্গুরোগীর চাপে বেসামাল মুগদা হাসপাতাল
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বেশি আলোচনায় রাজধানী ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, জুরাইন ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় শুরু থেকেই এবার ডেঙ্গুরোগী বেশি। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় এসব এলাকার মানুষের প্রথম পছন্দ মুগদা হাসপাতাল। ঢাকার হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বাধিক চাপ সামাল দিতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালে খোলা হয়েছে বিশেষ ইউনিট। তবু বড় একটি অংশ চিকিৎসা নিচ্ছে মেঝেতে শুয়ে।
রোগীর চাপে রীতিমতো নাভিশ্বাস অবস্থা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শতভাগ বেড রোগীতে পূর্ণ, বেডের পাশে ফ্লোরিং করেও ভর্তি রয়েছেন রোগী। ওয়ার্ডের বারান্দা, করিডোর কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। চাপের সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কা। তবু ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারীদের মনোবল ভাঙেনি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশে ‘মহামারির’ পর্যায়ে ডেঙ্গু, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
মুগদা হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে নার্সদের জন্য। কার ভাগ্যে কী ঘটছে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে রোগীর চাপে। একদিকে চিকিৎসক বা নার্স গেলে অন্যপাশ থেকে রোগীর নিকটাত্মীয় এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন সেবার জন্য।
রোগীর চাপ বাড়লেও সেবা নিয়ে অভিযোগ নেই রোগীর স্বজনদের। কথা হয় হাসপাতালটির দশম তলায় ভর্তি রোগী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে। গত বুধবার তিনি ডেঙ্গু পজিটিভ হওয়ার পরই হাসপাতালে ভর্তি হন। শুরুর দিনে পেট ফুলে যাওয়া, বমি, খাবার খেতে না পারা ও জ্বর ছিল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্লাটিলেট ২০ হাজারে নেমেছিল। এখন ভালো, ৫০ হাজারের ওপরে। ভালো সেবা পেয়েছি।
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থেকে সাতদিন আগে ভাইকে নিয়ে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। মিজান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুগদায় আমার এক আত্মীয়ের বাসা হওয়ায় এখানে ভাইকে ভর্তি করেছিলাম। সাতদিন আগে তার পেট ব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি, খাবারে রুচি ছিল না। খাবার খেলে বমি করতো, সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তার প্লাটিলেট ১৫ হাজারে নেমেছিল, এখন প্লাটিলেট ৫৭ হাজার। আজ ছাড়পত্র দিতে পারে। দূর থেকে এসেছি, সেবাও পেয়েছি। ভাই অনেকটা সুস্থ। নার্সদের বিরক্ত করেছি, তবুও তারা অভিযোগের পরিবের্ত সেবা দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে সিনিয়র সহকারী সচিবের মৃত্যু, ছিলেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা
সেবা নিয়ে কথা হয় সিনিয়র স্টাফ নার্স সোনালীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পরিচালক স্যারের নির্দেশ সব রোগীকে উত্তম সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি, এরপরও আমরা সবাইকে সমান সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, জুরাইন-মুগদা-বাসাবো-সবুজবাগ এলাকার রোগী সাধারণত বেশি আসে এ হাসপাতালে। এসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব বেশি হওয়ায় এ হাসপাতালে চারটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ রোগীর জন্য দুটি, শিশুদের জন্য একটি এবং নারী রোগীর জন্য একটি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
চলতি মাসের এখন পর্যন্ত (২৪ জুলাই দুপুর পর্যন্ত) আগের মোট ১০ হাজার ৩৬ জন রোগীর সঙ্গে ২৪ দিনে ৩ হাজার ১১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৮ জন, ছাড়পত্র নিয়েছেন দুই হাজার ৭০৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১০ হাজার ৭২৪ জন রোগী ভর্তি আছেন।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নিয়াতুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ১০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি। প্রতিদিনই রোগী আসছে। রোগীর চাপ বাড়লে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তবে আমাদের রোগী বাড়লেও কর্মরতদের মনোবল ভাঙেনি। আমাদের চিকিৎসক ও নার্সদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুতে আজও ৯ মৃত্যু, একদিনে সর্বোচ্চ ২২৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫ হাজার ২৭০ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ১৮৭ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৮৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে।
একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৭ হাজার ৬২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৬ হাজার ৬৪৪ এবং ঢাকার বাইরের ১০ হাজার ৯৭৮ জন।
এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ইএআর/এএসএ/এমএস