স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৩

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (৮ এপ্রিল) বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপাচার্য বলেন, স্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য সম্পদ। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। রোগ প্রতিরোধের ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।

মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে কৈশোরকালীন জীবনমান, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিসমূহ- যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার বিষয় বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ এবং কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিজয় কুমার পাল এবং সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিন। পরে মুক্ত অলোচনায় সবার জন্য সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক তার উপস্থাপিত গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলেন, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান কেমন এবং জীবনযাত্রার ভালো বা খারাপ মানের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলো অনুসন্ধান করা ছিল এ গবেষণার উদ্দেশ্য। এতে দেখা যায়, ৫২ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক মানের থেকে কম ছিল, এর মধ্যে ৫ শতাংশৈর জীবনযাত্রার মান অনেক খারাপ ছিল এবং ৪৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক ছিল। বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরী, যাদের ভাইবোন বেশি, যাদের বাড়িতে খাদ্য নিরাপত্তা কম, যারা বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপে ভুগছিল তাদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান খারাপ ছিল।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্পর্কিত জীবনযাত্রার ভালোমানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ হলো সন্তানের প্রতি পিতামাতার ভালো আচরণ, কিশোর-কিশোরীদের ভালো মানসিক অবস্থা এবং তাদের সমস্যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা। প্রতি ১০০ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ৪৮ জনের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান ভালো আর বাকি ৫২ জনের মান খারাপ থাকা অবশ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নকল্পের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অবশ্যই কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হবে এবং এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত নীতিমালা পর্যবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খানের বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অসংক্রামক রোগ ও ঝুঁকিসমূহ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে উচ্চ লবণাক্ত এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে শতকরা ৬১ জন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং শতকরা ৪০ জনের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত শর্করা রয়েছে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের ‘যেমন খাদ্য, তেমন স্বাস্থ্য’ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, পাউরুটি, কোমলপানীয়, ফ্রেঞ্চফ্রাই, চিকেন ফ্রাই এবং আচার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি ঘটাতে পারে এমন উপাদান যেমন অতিরিক্ত লবণ, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, লেড, ট্রান্স ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিজয় কুমার পালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পেশা গঠনে বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা ও প্রভাবিত হওয়ার কারণসমূহ নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের অনুপাত প্রায় সমান পর্যায়ে পেঁছেছে কিন্তু বিশেষত্ব বাছাইয়ে নারী-পুরুষ উভয় শিক্ষার্থীর মধ্যে তাদের জেন্ডার অনুযায়ী বিশেষত্ব বাছাইয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক তৈরি করতে হবে এবং নারী-পুরুষের চাহিদা অনুসারে কাজের সুযোগ তথা কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিনের কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ২২ জন কিশোর-কিশোরী। তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা করে দেখা গেছে, যারা স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসছে তাদের বেশিরভাগ কিশোরী। অভিভাবক, শিক্ষক এবং সেবা প্রদানকারী কিশোর-কিশোরীদের সেবা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কৈশরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো জেন্ডার রেসপন্সিভ হয়েছে, কিন্তু এসমস্ত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের গুণগতমান এবং স্থায়ীত্ব বজায় রাখার জন্য এখন কেন্দ্রগুলোকে জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ অ্যাপ্রোচে কাজ করতে হবে।

এএএম/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।