কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ ম্যাজিকের মাধ্যমে রোল মডেল হয়নি
মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কোনো ম্যাজিকের মাধ্যমে বিশ্বে রোল মডেল হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেছেন, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মহামারি মোকাবিলায় আমরা রোল মডেল হয়েছি। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার ফসল। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কোভিড মোকাবিলায় টাকার চিন্তা করেননি, মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে কাজ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিস মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক নির্দেশনায় কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সফলতা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতকে সম্পৃক্তকরণ ও উদ্ধুদ্ধ করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড মোকাবিলায় সাফল্য গোটা জাতির জন্যই একটি বিশেষ অর্জন ও সফলতা। এ সফলতায় সব থেকে বেশি অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি সরাসরি সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা দিয়েছেন। নিজে সার্বিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে মহামারিতে সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশনা মতো কাজ করে গেছি। স্বাস্থ্যখাতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন যা কিছু চেয়েছি তিনি আমাদের সেগুলো দিতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেননি। প্রধানমন্ত্রী টাকার চিন্তা করেননি, তিনি মানুষের জীবনের চিন্তা আগে করেছেন।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা আজ বিশ্বের পঞ্চম স্থান পেয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ কৃতিত্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঠিকভাবে কাজ করায় আমরা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছি। আজ আমাকে যেভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হলো এটি আমি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) গোটা চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পক্ষে গ্রহণ করে সম্মানিত বোধ করছি। এর মাধ্যমে গোটা চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতকে যেভাবে সম্মান দেওয়া হলো সেজন্য আমি বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
করোনার সময়ে দেশের বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত একযোগে নির্দেশনা মেনে কাজ করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তখন দেশ-বিদেশে সব মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন। শুরুতে মানুষ কোনো এলাকায় হাসপাতাল করতে দিতেন না। মানুষ করোনার ভয়ে সেসময় করোনা হাসপাতাল করার বিপক্ষে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন। তখন দেশের প্রাইভেট মেডিকেল হাসপাতালগুলো সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এসব কারণে করোনা মোকাবিলায় আমাদের কাজগুলো আরও সহজ হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল প্রায় ৬২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা মহামারিতে নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১০০ বছরের ইতিহাসে কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ ও প্রয়োগে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে বেসরকারি স্বাস্থ্যখাতের পক্ষ হতে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কোভিড মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন দিক কর্মপরিধি বিশেষত: ভ্যাকসিন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যখন ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করছে তখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তা বিনামূল্যে পেয়েছেন। বাংলাদেশ একদিনে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্বে বিরল রেকর্ড করেছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, যখন আমেরিকা ও ইটালিতে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয় তখন বাংলাদেশে আক্রান্তের হার বাড়লেও এক পর্যায়ে সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে। ২০২০ সালের জুনের শেষে এবং জুলাইয়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু হার কিছুটা বাড়তে থাকে, পরে সেটিও নিয়ন্ত্রণে আসে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এম মুবিন খানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অবদান রাখায় বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে ৩৫ প্রতিষ্ঠান ও ১০ ব্যক্তিকে ‘কোভিড হিরো’ আখ্যায়িত করে পুরস্কার দেওয়া হয়।
এএএম/এমকেআর/এএসএম