ঠান্ডাজনিত রোগে দেড়মাসে ৭৮ মৃত্যু, শীর্ষে চট্টগ্রাম
নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীত নেমেছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখসহ বাড়ছে বিভিন্ন রোগ। বেশি অসুস্থ হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। শিশু হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বেড়েছে।
চলতি শীত মৌসুমে সারাদেশে ঠান্ডাজনিত অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনস (এআরআই) এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। বিভাগটিতে ৫৩ জন মারা গেছেন।
গত ১৪ নভেম্বর থেকে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত সময়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর এক বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ১৪ নভেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে ৫০ হাজার ১৩০ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৫ জন মারা গেছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ২৯ হাজার ১৪৪ জন। মারা গেছেন তিনজন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় শীতকালীন রোগ অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনস (এআরআই) ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ২৫৩ জন। একইসময়ে মারা গেছেন দুজন।
আরও পড়ুন: তীব্র শীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ, বেশি ঝুঁকিতে শিশু-বয়স্করা
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী চট্টগ্রামে। এ বিভাগে ১৪ নভেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৪৭ জন রোগী এ রোগে ভুগছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা বিভাগে (মহানগর ব্যতীত) ১১ হাজার ৬৭৯ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।
আর ময়মনসিংহে তিন হাজার ৬৭৯ জন, রাজশাহীতে এক হাজার ৯২৬ জন, রংপুরে এক হাজার ৫৬০ জন, খুলনায় ছয় হাজার ৭৪৯ জন, বরিশালে তিন হাজার ৩৬১ জন ও সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৯২৯ জন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে মারা যাওয়া ৭৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এ বিভাগে মারা গেছেন ৫০ জন। এছাড়া ময়মনসিংহে ২১ জন, খুলনায় দুজন ও বরিশালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: কনকনে শীতে চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন বিপর্যস্ত, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ দুই লাখ ২৮ হাজার ৮০৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ১৪ নভেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে এ বিভাগে কেউ মারা যাননি।চট্টগ্রাম বিভাগে একই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভাগটিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৯৩ জন।
এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ১২ হাজার ৯২৯ জন, রাজশাহীতে ১৩ হাজার ৩২১ জন, রংপুরে আট হাজার ৬৪১ জন, খুলনায় ১৬ হাজার ৮৯৭ জন, বরিশালে ১০ হাজার ৫২২ জন ও সিলেট বিভাগে সাত হাজার ১৩৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ, বেশি আক্রান্ত শিশু
চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে যাওয়ায় রোগের তীব্রতা বাড়ছে এবং এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। দ্রুত চিকিৎসা নিলে এবং সচেতন থাকলে এসব রোগে আক্রান্ত কম হবে। মৃত্যুও কমে আসবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে প্রতিদিন ডায়রিয়া নিয়ে সাড়ে তিনশো রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই শিশু রোগী। তাদের বেশিরভাগের বয়স পাঁচ বছরের নিচে।
এএএম/এএএইচ/এমএস