ক্যানসার হাসপাতাল
তিন বছরে চিকিৎসা নিতে আসা ৪৩ শতাংশের ক্যানসার শনাক্ত
রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে তিন বছরে (২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০) প্রায় ৮৪ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ রোগীর প্রাথমিকভাবে ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।
প্রকাশিতব্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন বছরে ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৮৩ হাজার ৭৯৫ জন রোগী সেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৩৩ (৪২ দশমিক ৬ শতাংশ) জনের চূড়ান্ত কিংবা প্রাথমিকভাবে ক্যানসার রোগ ধরা পড়েছে। এসব রোগীদের রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) হাসপাতালের অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন (ক্যানসার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট ২০১৮-২০২০) সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও চিকিৎসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এম আমিরুল মোর্শেদ অনুষ্ঠানে যথাক্রমে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যানসার রোগীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সুনির্দিষ্ট নিয়মে সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করার পুরো ব্যবস্থার নাম ক্যানসার রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন। এ নিবন্ধন দুই ধরনের (হাসপাতালভিত্তিক ও জনগোষ্ঠীভিত্তিক) হয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে একটি হাসপাতালে আসা রোগীদের পরিচিতি, সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত তথ্য, রোগনির্ণয়, চিকিৎসা ও তার ফলাফল, এসব সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- সংগৃহীত তথ্য এমনভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে প্রয়োজনে তা সহজেই নাগালের মধ্যে পাওয়া যায়। একইসঙ্গে চিকিৎসা সেবার মূল্যায়ন ও মান উন্নয়নসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করা যায়।’
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, তবে এ ধরনের রেজিস্ট্রি থেকে কোনো এলাকা বা দেশের ক্যানসার রোগীর সংখ্যা, আক্রান্তের বা মৃত্যুর হার বের করা যায় না। কারণ একটি হাসপাতালে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার সব ক্যানসার রোগী চিকিৎসার জন্য আসছে, এটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। রোগীর সংখ্যা জানা গেলেও কত জনসংখ্যা থেকে এ রোগীরা আক্রান্ত হয়েছে, সেই তথ্য এখানে থাকে না।
‘অন্যদিকে জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীতে নতুন ক্যানসার রোগীদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নেওয়া হয়। এর ফলে এ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীতে ক্যানসারে আক্রান্তের পরিসংখ্যান বের করা যায়, যা একটি ক্যানসার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়নে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়’ বলেও জানান এ চিকিৎসক।
ক্যানসার রেজিস্ট্রি কেন প্রয়োজন- এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রাসকিন বলেন, ‘এ থেকে ক্যানসার পরিস্থিতির বিস্তার ও ধরণ জানা যায়। শরীরের কোন কোন জায়গায় ক্যানসার বেশি হচ্ছে, নারী-পুরুষ, শ্রেণি-পেশা ও বয়স ভেদে কারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, কোন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে এসব তথ্য পাওয়া যাবে। তবে জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রির অনুপস্থিতিতে হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি থেকে ক্যানসারের বিন্যাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।’
দেশে জনগোষ্ঠীভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ক্যানসার রোগতত্ত্ব বিভাগের উদ্যোগে ২০০৪ সালে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন চালু হয়। ২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত এর রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। বুধবার ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের তিন বছরের প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
এমইউ/এএএইচ/এমএস