নিরাপদ স্যানিটেশন নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে বাস্তবায়ন ততটা হয়নি

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২২
ফাইল ছবি

মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শৌচাগার বা টয়লেট। কারণ, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করলে রোগবালাই ছড়াতে পারে। এমনকি সঠিক পদ্ধতি মেনে শৌচকর্ম না করলেও নানারকম রোগ ছড়ায়। কিছু কিছু রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এরপরও সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়টি সঠিকভাবে পালন করতে অনীহা অনেকেরই। বিশ্বের অনেক দেশই এখনো শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধ হলেও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন স্যানিটেশনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ স্যানিটেশন নিয়ে দেশে যতটা আলোচনা হয়েছে, বাস্তবায়ন ততটা হয়নি। 

জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সবার জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার থাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম-২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মাত্র ৩৯ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে। এই হিসাবে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৬১ জন এখনো নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে।

দেশের ৫৬ দশমিক ০৪৫ খানায় ফ্লাশ করে/পানি ঢেলে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। এক দশমিক ২৩ শতাংশ খানায় টয়লেট ব্যবস্থা নেই। দেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধ হলেও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন স্যানিটেশনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (১৯ নভেম্বর) দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব টয়লেট দিবস- ২০২২’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মেকিং দ্য ইনভিজিবল ভিজিবল’ অর্থাৎ ‘অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা’। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে নিরাপদ টয়লেট থাকা বা না থাকার কারণে সৃষ্ট সমস্যাকে অদৃশ্য বা লুকিয়ে না রেখে দৃশ্যমান বা গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। দিবসটির এবছরের কেন্দ্রীয় বার্তা হলো, নিরাপদভাবে পরিচালিত স্যানিটেশন দ্বারা মানববর্জ্য দূষণ থেকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানিকে রক্ষা করা।

আরও পড়ুন: দেশে স্যানিটেশন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ শতাংশ

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ০৪৫ খানায় ফ্লাশ করে/পানি ঢেলে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। এক দশমিক ২৩ শতাংশ খানায় টয়লেট ব্যবস্থা নাই। দেশে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধ হলেও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন স্যানিটেশনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, সারাবিশ্বে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ছাড়াই বাস করে। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করে। তবে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা নারীদের পক্ষে কঠিন।

jagonews24

মানুষ বৈধ-অবৈধভাবে যেখানেই থাকুক না কেন সবার জন্যই নিরাপদ স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত জরুরি। না হলে রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাবে। দেশে নিরাপদ স্যানিটেশন নিয়ে আলোচনা বেশি হলেও বাস্তবায়ন সে অনুযায়ী হয়নি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওরের (ডরপ) উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন (শৌচাগার) সুবিধার অভাব জনস্বাস্থ্য, সম্ভ্রম এবং সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলে। মাটিবাহিত হেলমিন্থিয়াসিস, ডায়রিয়া, সিসটোসোমায়োসিস এবং শিশুদের অস্বাভাবিক স্বল্পবৃদ্ধিসহ বহুবিধ রোগের কারণ ও বিস্তারের সঙ্গে শৌচাগারের অভাব অনেকাংশে সম্পর্কিত। কিন্তু এখনো দেশের জনগণের বড় একটা অংশ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বর্তমানে ৭৭ শতাংশ খানা শৌচাগার টয়লেট ব্যবহার করে। তাছাড়া উপার্জন শ্রেণি অনুযায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থায় বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আরও পড়ুন: ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ৬১% পরিবার, খোলা মাঠ ব্যবহার ০.২৭%

স্যানিটেশন খাতে বার্ষিক বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। অনেকটা ঐচ্ছিক বরাদ্দের মতো। দেশের শতভাগ মানুষের নিরাপদ স্যানিটেশন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে অবশ্যই এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালের ২৮ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে নিরাপদ ব্যবস্থাপনার (সেইফলি ম্যানেজড) টয়লেট ব্যবস্থার আওতায় আসার গতি খুব ধীরে বাস্তবায়ন হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ মৌলিক হাত ধোয়ার সুবিধার আওতায় থাকলেও মাত্র ১৬ শতাংশ বাড়িঘরের বর্জ্যপানি পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। শতভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে না পারলে এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) লক্ষ্যমাত্রা-৬ অর্জন সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞাপন

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ বৈধ-অবৈধভাবে যেখানেই থাকুক না কেন সবার জন্যই নিরাপদ স্যানিটশেন ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত জরুরি। না হলে রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাবে। দেশে নিরাপদ স্যানিটেশন নিয়ে আলোচনা বেশি হলেও বাস্তবায়ন সে অনুযায়ী হয়নি। শহরে এখনো নিরাপাদ স্যানিটেশন অপ্রতুল। বস্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার অবস্থা বেশি খারাপ। সরকারি উদ্যোগে এ সমস্যার সামাধান করতে হবে। এতে মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে, পরিবেশ উন্নত হবে।

আরও পড়ুন: টয়লেট ব্যবহারে সবচেয়ে স্মার্ট ঢাকার মানুষ

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সামাজিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় মুখার্জী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট ১১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। যা মোট উন্নয়ন বাজেটের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় স্যানিটেশন খাতে বার্ষিক বরাদ্দ কত অপ্রতুল। অনেকটা ঐচ্ছিক বরাদ্দের মতো। দেশের শতভাগ মানুষের নিরাপদ স্যানিটেশন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে অবশ্যই এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজি প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এএএম/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।