৩০ বছরেই কেন স্তন ক্যানসার, গবেষণা প্রয়োজন: স্বাস্থ্যসচিব
দেশে ৩০ বছর বয়সেই নারীরা কেন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা জানার জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
তিনি বলেছেন, বহির্বিশ্বে স্তন ক্যানসার রোগে ৫০ বছরের পর আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে ৩০ বছর পর থেকেই নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি কেন হয় সেজন্য গবেষণা প্রয়োজন। কেন আমাদের দেশের মানুষ আগে আক্রান্ত হচ্ছে সেটা জানা দরকার। গবেষণা হলে একটা ভিত্তি থাকে, যেটাকে নিয়ে কাজ করা যায়।
শনিবার (২২ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শহীদ ডা. সামছুল আলম খান মিলন অডিটোরিয়ামে স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস উপলক্ষে আয়োজিত ‘স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে, এগিয়ে চলি একসাথে’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢামেকের সার্জারি ও রেডিওথেরাপি বিভাগের উদ্যোগে শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, নারীরা দুই ধরনের ক্যানসারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, একটি জরায়ুমুখ ক্যানসার ও অন্যটি স্তন ক্যানসার। আমরা জরায়ুমুখের যে ক্যানসারের স্ক্রিনিং উপজেলা পর্যায়ে চালু হয়েছে, এই প্রোগ্রামের সঙ্গে স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং টাও একই সঙ্গে যেন করা যায় সেটিও আগামী বছর থেকে দেখা হবে।
তিনি বলেন, পরিবারের সবার স্তন ক্যানসারের বিষয়ে জানা উচিত যে, এটি একটি রোগ, এতে নারীরা আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু এটি ব্যয় বহুল। অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে হবে। তারপরও ৫০ শতাংশ নারী এই রোগে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু তারা অনেক ব্যয় করেই মারা যাচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন বলেন, স্তন ক্যানসার নিয়ে মানুষের মধ্যে এখনো অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। স্কুল পর্যায়ে স্তন ক্যানসার শীর্ষক লিফলেট বিতরণ করে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর সঙ্গে চিকিৎসকরা নিজেদের ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেবেন। যেন চিকিৎসকরা সুস্থ থেকে অন্যদের সেবা দিতে পারেন। কারণ চিকিৎসক একজন মারা গেলে তার বিকল্প হিসেবে আরেকজন নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, আমি মনে করি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ঢাকা মেডিকেল থেকেই শুরু হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করা হবে। ৫০ বছরের পর পুরুষরা প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এ নিয়েও আমাদের কোনো স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম নেই। এটি নিয়েও কাজ করতে হবে।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং ব্যবস্থা আছে, এ সেবা আরও উন্নত করার জন্য নতুন মেমোগ্রাফি আমরা কিনেছি। এটা খুব দ্রুত চলে আসবে। এই মেমোগ্রাফিসহ মেশিন পরিচালনার জন্য আমাদের টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। সেজন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে আহ্বান জানাবো। এটা যতদিন না হবে ততদিন আমরা অন্যভাবে চালানোর চেষ্টা করবো।
নাজমুল হক বলেন, এখন মানুষের মধ্যে অনেকভাবেই সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এখন মহিলারা তাদের শরীরে কোনো চাকা বা কিছু হলে চিকিৎসকের কাছে চলে আসেন। তবুও সামাজিকভাবে কিছু ট্যাবু রয়ে গেছে। সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন মানুষ এ বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন বিভাগের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোর্শেদ প্রমুখ।
এএএম/আরএডি/এমএস