মেয়াদোত্তীর্ণ এমআরআই : সচলের নামে লাখ টাকা গচ্চা
দেশের অন্যতম বৃহৎ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক্সরে অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে মেয়াদোত্তীর্ণ এমআরআই মেশিনে চলছে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জটিল রোগব্যাধি নিখুঁতভাবে শনাক্তকরণে ব্যবহৃত এ মেশিনটির আয়ুষ্কাল আরো বছর দুয়েক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
লাখ লাখ টাকা খরচ করে খুচরা যন্ত্রাংশ বদলে মেশিনটি জোড়াতালি দিয়ে চালানো হলেও প্রায়শই বিকল হয়ে পড়ছে।মাসখানেক আগে সারিয়ে তোলা হলেও সপ্তাহ দেড়েক আগে মেশিনটি ফের বিকল হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন ও বিভাগের চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্টদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে জাপানি হিটাচি কোম্পানির এমআরআই মেশিনটি ঢামেক হাসপাতালের জন্য কেনা হয়। নানা কারণে মেশিনটি প্রায় দুই বছর পর ২০০৭ সালে স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু হয়।
এমআরআই মেশিনটি যখন সচল ছিল তখন মাত্র হাজার তিনেক টাকায় রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পেতেন। কিন্তু বর্তমানে ডাক্তারের পরামর্শে একই পরীক্ষা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে রোগীদের দ্বিগুণেরও বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। এছাড়া রোগীর সবচেয়ে বড় ভোগান্তি হয় যখন রোগ নির্ণয়ের জন্য তাকে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা গাড়ি ভাড়া করে টানা হেঁচড়া করা হয়।
শনিবার সকালে এক্সরে অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, এমআরআই কক্ষের বাইরের দরজায় তালা ঝুলছে। দরজায় ঝুলছে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমানের ২ নভেম্বর স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা। হাতে গোণা সীমিত সংখ্যক কয়েক ধরনের এমআরআই- ব্রেন, সাভিক্যাল স্পাইন, ডরসাল স্পাইন, লাম্বার স্পাইন ছাড়া অন্য কোনো ধরনের এমআরআই না করতে টেকনোলজিস্টদের নিদের্শনা লেখা রয়েছে।
এক্সরে বিভাগের একাধিক চিকিৎসক জানান, খাতা কলমে গড়ে প্রতিদিন ৮/১০টি করে এমআরআই’ এর হিসাব লিপিবদ্ধ করা হলেও বাস্তবে হয়েছে দুই তিন গুণেরও বেশি। দিনের পর দিন বিভিন্ন প্রভাবশালীদের (মন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ) অনুরোধে ঢেঁকি গিলে প্রতিদিনই অতিরিক্ত এমআরআই করার ফলে মেশিনটি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
চিকিৎসকরা জানান, সরকারি নিয়মে ভবঘুরে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও অজ্ঞাত রোগীদের বিনামূল্যে এমআরআই করার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তাদের চেয়ে সুবিধাবাদী দলের লোকজনই বেশি সংখ্যায় বিনামূল্যে এমআরআই করিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আগে তারা গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টি এমআরআই করতেন। কিন্তু মেশিন বিকল থাকায় গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর জানান, এমআরআই মেশিনটি অনেক দিনের পুরোনো। মেশিনটিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক এক্সপোজার লিমিটের মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার পার্টস কিনে যন্ত্রটি সচল রাখা হয়েছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগীর কোনো প্রকার ক্ষতি হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি জাপানি রিকন্ডিশন মেশিনের উদাহারণ টেনে বলেন, মেশিনের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো ক্ষতি হয় না।
তিনি জানান, নতুন একটি অত্যাধুনিক মেশিন কেনার চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিকল মেশিনটি আবার সচল হবে কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমআরআই মেশিনটি সচল করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া মেশিনের পার্টসের ওয়ারেন্টি থাকে না। ফলে লাখ লাখ টাকা খরচ করলে তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি