‘৮০ শতাংশ কিডনি রোগীই চিকিৎসার অভাবে মারা যান’
গত দশ বছরে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুনেরও বেশি বেড়েছে। আর এ দুটি অসংক্রামক রোগের কারণে প্রতি বছর কিডনি রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। এর মাত্র ২০ ভাগ রোগীর চিকিৎসা করার সুযোগ রয়েছে। বাকি ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দুই দিনব্যাপি ১৬তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, যাদের বয়স ৪০ বছরের বেশি এবং যাদের পরিবারে কিডনি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী আছে তাদের বছরে অন্তত দুইবার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া লবন কম খাওয়া, চিনি জাতীয় খাবার ও ফাস্টফুড পরিহার করে কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম করার মতো নিয়মগুলো মেনে চলা দরকার। এতে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি কিডনি রোগের প্রকোপও কমে আসবে।
কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, যখন কিডনির কার্যকারিতা কমে যায় তখন ক্রমান্বয়ে হৃদরোগও বৃদ্ধি পায়। কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকলে মাত্র ২ ভাগ কিডনি রোগী হার্টের জটিলতায় ভোগে। কিন্তু কিডনির কার্যকারিতা ৮০ ভাগ কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের প্রবনতা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। কিডনি ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মুহিবুর রহমানসহ দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান কিডনি রোগ ও ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেন। কিডনি রোগের নানা দিক, ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা, মৃত ব্যক্তির কিডনি- রোগীর দেহে সংযোজনসহ উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি এ ভার্চুয়াল আলোচনায় উঠে আসে।
জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, অসংক্রামক রোগের ভয়াবহতা বেশি। কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ -এই তিনটি রোগের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পেলে জীবনের ঝুঁকি অনেকাংশে এড়ানো যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। ফলে তারা কখনো ডাক্তারের শরনাপন্ন হন না। যখন তারা ডাক্তারের শরনাপন্ন হন তখন দেখা যায়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারনে তাদের কিডনির কার্যকারিতা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগী। এ রোগের বিস্তার রোধে সবাইকে সতর্ক হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা ও ব্যায়াম করা ছাড়াও খাদ্যাভাস পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ, ফাস্টফুড পরিহার করতে পারলে ডায়াবেটিস বহুলাংশে রোধ করা যায়।
এমইউ/এমএইচআর/জেআইএম