‘দেশে ৫০ শতাংশ রোগীর নিউমোনিয়ার কারণ জানা যায় না’
মৃত্যুহার নয়, কত সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সেই সংখ্যা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার কারণ জানা যায় না। রোগের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, পুষ্টিহীনতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুহার হ্রাস করা সম্ভব।
বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস (১২ নভেম্বর) উপলক্ষে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর, বি) মহাখালী ক্যাম্পাসে আয়োজিত বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুরোধে করণীয় বিষয়ক একটি আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়।
যুক্তরাষ্টের দাতা সংস্থা ইউএসএইড-এর সহায়তায় এই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে আইসিডিডিআর, বি’র রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)।
শিশু বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. সমীর কুমার সাহা, আইসিডিডিআর, বি’র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেসের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী ও ড. আহমেদ এহসানুর রহমান এবং আরডিএম অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি ও আইসিডিডিআর, বি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. শামস এল আরেফিন সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু রোধ বিষয়ে মতামত বিনিময় করেন।
ড. এহসানুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সক্ষমতা আছে। সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য সোর্সও অনুপস্থিত। মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জেলা হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার আছে। অভিভাবকদের মধ্যেও সন্তানকে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার প্রবণতা দুর্বল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রফেসর ড. রুহুল আমিন বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যু হারের ১৮ শতাংশ নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু। এই মৃত্যুহার হ্রাসে তিনি শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া, ৬ মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ওপর প্রচারণা চালাতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার, স্বল্পমূল্যের দেশীয় অক্সিজেন স্বল্পতা দূর করার বিষয়ে ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরি বাবল সিপ্যাপ নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম। অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর প্রবণতা ১৫ গুণ বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।
সভায় সাংবাদিকরা নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু, নিউমোনিয়ার কারণ ও প্রতিকার সংক্রান্ত নানা বিষয়ে তাদের প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, গত দুই দশকে শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি সাধন করেছে। তারপরও দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশে প্রতিবছর ২৪ হাজার ৩০০ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায়।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী, ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দেয়া ৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে নেয়া হয় এবং মাত্র ৩৪ শতাংশ এন্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করে। বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৭ অনুযায়ী নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর ৪৫ শতাংশ ঘটে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সমূহের চিকিৎসাজনিত অপ্রতুলতার একটি চিত্রও এর থেকে বোঝা যায়।
এমইউ/এমএসএইচ/পিআর