ধনীদের দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি এখন গরীবের গলার কাঁটা
ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, স্ট্রোক ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগ এক সময় শুধুমাত্র ধনী মানুষের রোগ বলে বিবেচিত হলেও দরিদ্রদের মধ্যে ক্রমেই এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক ও হৃদরোগ ধনী মানুষের চেয়ে বর্তমান সময়ে দরিদ্র মানুষের মধ্যেই আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাই বেশি। আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আইসিডিডিআর`বি-এর গবেষকরা তাদের মতলবের গ্রামীণ হাসপাতালে গত ২৪ বছরে আগত রোগীদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়া কিংবা রোগে ভুগে দরিদ্র পরিবারগুলোতে আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ও অসংক্রামক রোগ অদূর ভবিষ্যতে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলেও মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
গত ১৩ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইপিডিমেওলজিতে ‘ডিস্ট্রিবিউশন অব ক্রনিক ডিজিজ মর্টালিটি অ্যান্ড ডিটারিওরেশন ইন হাউজহোল্ড সোশিওইকোনমিক স্ট্যাটাস ইন রুরাল বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানালাইসিস ওভার এ টুয়েনটিফোর ইয়ার পিরিয়ড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া গত বছর প্রকাশিত ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজেস’ প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুহার সাফল্যের সঙ্গে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ও গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক ব্যাধি যেমন- ড্য়াাবেটিস ও দীর্ঘস্থায়ী বক্ষ্যবাধিতে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে।
আইসিডিডিআর`বি-এর পৃথক আরও দুটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে মাতৃ মৃত্যু হার বেশি ছিল কিন্তু ২০১০ দেখা গেছে প্রাথমিকভাবে তাদের মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার।
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ দেশে অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আশঙ্কাজনক তথ্য হলো- ৬০ বছরের কম বয়সী মানুষ যারা গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা তাদের শতকরা ১১ ভাগ আক্রান্ত হলেও এ ব্যাপারে তারা অসচেতন। অনেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পান না, আবার যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পারেন তাদের মধ্যে মাত্র শতকরা ৫০ ভাগ সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন।
বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানচেটে সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের সমাধান হিসেবে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সকল প্রকার অসংক্রামক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি দ্রুত শনাক্ত ও প্রয়োজনে তাদের মাধ্যমে উচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের কাছে প্রেরণের উপদেশ দেয়া হয়েছে।
এমইউ/আরএস/পিআর