হজমশক্তি বাড়াতে যা জানা জরুরি
সুস্বাস্থ্যের জন্য হজমশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি বাধাগ্রস্ত হলে বা কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীরই স্থবির হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, লিপিড প্রোফাইল বেড়ে যাওয়া, ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়া, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজম প্রক্রিয়ার তিনটি ধাপ থাকে। এগুলো হচ্ছে, কী খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটা, ওই খাবার পরিপূর্ণভাবে হজম হওয়া এবং হজমের পর সেটা দেহে শোষণ হওয়া। এই তিনটি ধাপই দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলছেন পুষ্টিবিদরা।
একেক জনের মেটাবলিজিম বা হজমশক্তি একেক রকম হয়। অনেক সময় দেখা যায় যে, একই রকম খাবার খেয়েও একজন মোটা হয় কিন্তু আরেক জন হয় না। যারা হোস্টেলে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
পুষ্টিবিদদের মতে, হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য একজন ব্যক্তির এটা খেয়াল রাখা জরুরি যে কোন খাবার খেলে সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করা। এছাড়া অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবেও হজমশক্তি দুর্বল হয়ে থাকতে পারে।
নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চললে হজমশক্তি বাড়ানো যায়। তবে হজমশক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া বা একে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া সবার জন্য এক রকম হয় না। ব্যক্তিভেদে এটা ভিন্ন হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, নিম্নোক্ত নিয়ম মেনে হজমশক্তি বাড়ানো যায়-
২. শারীরিক ব্যায়াম
সব ধরনের শারীরিক ব্যায়াম হজমশক্তিকে বাড়ায় না বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। মেটাবলিজম বা হজমশক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ মানুষের কোমরের দিকটায় বা ডায়াফ্রামের ওপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত থাকে বলে জানান তারা। তাদের মতে, যেসব ব্যায়াম শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড যত ভালো হবে হজম প্রক্রিয়া তত সুন্দর হবে।
শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড বাড়াতে হলে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যায়াম করতে হবে। যেমন, চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে রিভলভিং চেয়ার ব্যবহার করলে শরীরের নড়াচড়া সহজ হয়। একই সঙ্গে, বসার ক্ষেত্রে যদি টুইস্টিং পদ্ধতি অর্থাৎ শরীরের ওপরের অংশ একদিকে এবং নিচের অংশ আরেক দিকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়।
এটা বাদেও আরও কিছু ব্যায়াম করা যায়। যেমন, শুয়ে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দুই পা উঁচু করে রাখতে হবে এবং পা দুটি চক্রাকারে অর্থাৎ বাম থেকে ডানে এবং ডান থেকে বামে ঘোরাতে হবে। এটা খুব ভালো কাজ করে। স্পট জগিং বা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি জগিং করা যায় বা হালকা করে লাফানো, এ ধরনের ব্যায়ামও খুব উপকারী হজমশক্তির জন্য।
৩. খাবার
হজমশক্তি বাড়াতে খাবারের প্রকারটা বুঝতে হবে। যেমন খাবারে যদি শাক থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। আবার মাংস জাতীয় কিছু খেলে সঙ্গে যাতে লেবু থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া প্রতিবার খাওয়া শেষ করে অল্প পরিমাণ লেবু-পানি খেলে সেটি হজমের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া খাবার খাওয়া শুরু করার আগে জিহ্বাতে অল্প একটু লবণ স্পর্শ করিয়ে খাবার খেলে সেটিও হজমে সাহায্য করে।
গাট ব্যাকটেরিয়া যা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে সেগুলো বেশি খাওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে এই ব্যাকটেরিয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে দই। পুষ্টিবিদদের মতে, যাদের হজমে সমস্যা হয় তাদের জন্য ইয়োগার্ট থেরাপি বা দই খাওয়াটা উপকারী হতে পারে। দিনের কোনো একটা সময় দেড়শ থেকে দুইশ মিলিলিটার দই খাওয়া যেতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
রাত জেগে থাকাটা হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে। পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রাতের বেলা এমনিতেই পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। সেই সঙ্গে রাতের বেলা ফুসফুসের বেশিরভাগ অংশ অব্যবহৃত থাকে। যার কারণে পুরোপুরি শ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। আর জেগে থাকলে মানুষের সব ইন্দ্রিয় কাজ করে বলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়, যা হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই হজমশক্তিকে বাড়াতে হলে বা একে বেশি কর্মক্ষম করতে হলে রাতে ঘুমানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
৫. শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়া কতটা ভালভাবে কাজ করবে তা অনেকটাই নির্ভর করে যে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ আছে কি-না। আর হজম বা শোষণ প্রক্রিয়ার জন্যও অক্সিজেনের বিকল্প নেই। সে কারণেই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটা জরুরি বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। এতে হজম সহজ হয়। বিবিসি বাংলা
এসআর/পিআর