স্বাস্থ্য সেক্টরে কমছে যোগ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা
স্বাস্থ্য সেক্টরে যোগ্য শিক্ষক ও কর্মকর্তার সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। অবসরজনিত কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ এর আওতাধীন বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা অবসরে যাচ্ছেন তাদের স্থলে সমমানের মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছে না। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে তার চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরত্বপূর্ণ পদে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে স্বাস্থ্য সেক্টরে বিরুপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. এখলাছুর রহমান অবসরে যান। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। শিশু চিকিৎসার উন্নয়নেও তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণকর্মী। তার অবসরে যাওয়া উপলক্ষে ঢামেক কর্তৃপক্ষ এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উপস্থিত সকলেই তার শূন্যতা পূরণ নয় উল্লেখ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তার সাফল্যমণ্ডিত জীবন নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করে লিখেন, তিনি ছিলেন একাধারে ভালো শিক্ষক ও বড় মনের মানুষ।
এছাড়া সম্প্রতি ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী পিআরএল (পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ) এ যান। চিকিৎসা শিক্ষার মৌলিক এ বিষয়টিতে যোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই কম। সারাদেশে তিনিসহ মাত্র দু’জন অধ্যাপক ছিলেন।
তার অবসরে যাওয়াকে ফরেনসিক মেডিসিন শিক্ষার জন্য মারাত্মক ক্ষতি বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক মেডিসিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ঢামেক অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ার আগেই তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠালেও যোগ্য এই শিক্ষককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নানও সম্প্রতি অবসরে গিয়েছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে শিক্ষক ও প্রশাসক হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গত কয়েক বছর চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখায় কাজ করেছেন তিনি।
অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন পরিচালক চিকিৎসা শিক্ষার পাশাপাশি পরিচালক হাসপাতাল ও বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক এমনকি মহাপরিচালকের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ও কলঙ্ক মাথায় নিয়ে অবসরে যেতে হয়েছে। তার মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব স্বাস্থ্য সেক্টরে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) পদটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ পদ হলেও গত ছয় মাসেরও বেশি সময় যাবত পদটি শূন্য পড়ে আছে। ৩০ এপ্রিল পিআরএলে যান সর্বশেষ নিয়োগপ্রাপ্ত ডা. শাহ নেওয়াজ। একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসা এই কর্মকর্তা প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি অবসরে যাওয়ার পর পরিচালক চিকিৎসা শিক্ষা অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ডা. মো. শাহনেওয়াাজকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ফিরিয়ে আনার কথা শোনা গেলেও তা আর হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) পদটি গত কয়েক বছর ধরে শূন্য। পরিচালক এমআইএস অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তেজগাঁওয়ের নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের পদটি অবসরজনিত কারণে শূন্য হয়ে আছে। সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকারভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্প পরিচালক পদটিও শূন্য হয়ে গেছে। বর্তমানে একজন যুগ্ম সচিব অপারেশন প্ল্যানের আওতায় সেটি দেখছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীসহ দেশের একাধিক সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও পরিচালকসহ বিভিন্ন শীর্ষ পদে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের চেয়ে মেধা ও যোগ্যতায় শিক্ষক কর্মকর্তা থাকলেও দলীয় বিবেচনায় কিছু সংখ্যক দলীয় চিকিৎসক নেতাকে নিয়োগ দেয়াকে স্বাস্থ্য সেক্টরের জন্য শুভকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
এমইউ/আরএস/এআরএস/এমএস