‘নির্বাচন হলে ইকবাল আর্সলান জয়ী হতে পারবেন না’


প্রকাশিত: ০৬:১২ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

‘চ্যালেঞ্জ করে বলছি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সম্মেলনে ভোটাভুটি হলে অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান জয়ী হতে পারবেন না। গত ১৩ বছরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করা বহু পরীক্ষিত চিকিৎসককে তিনি পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছেন। স্বাচিপের সেই সকল চিকিৎসকরা ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বঞ্চনার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবেন।’ সভাপতি পদপ্রত্যাশী স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিবকে এভাবেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জুলফিকার আলী লেনিন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পরিচালক পদে (যদিও তিনি এ পদটি ব্যবহারে মোটেই উৎসাহি নন) কর্মরত এই চিকিৎসক শনিবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে স্বাচিপের সম্মেলন ও নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপকালে বলেন, ২০০১ সালে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে প্রকল্পের চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। তার দুই বছর পর   শিবিরের সভাপতি যে চিকিৎসক হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে যোগদান করেছিলেন তাকে পদোন্নতি দেয়া হলেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।

শুধু তিনিই নন, এমন শত শত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী সুযোগ পেলে ব্যালটের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘স্বাচিপের নির্বাচন হলে সভাপতি পদে যে কারো সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। যেকোনো হেভিওয়েট কিংবা সুপার হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার ব্যাপারেও সম্পূর্ণরুপে আশাবাদী।’

এমন মন্তব্যের জের ধরেই ডা. লেনিন এ সব কথা বলেন। ইকবাল আর্সলানের বিপরীতে কে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় হলেই সব জানতে পারবেন।

দীর্ঘ ১৩ বছর পর আগামী ১৩ নভেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বাচিপের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

আসন্ন স্বাচিপের সম্মেলনকে সামনে রেখে স্বাচিপের নবীন-প্রবীণ চিকিৎসকদের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও সাব-কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। বিভিন্ন পদে নির্বাচনের ব্যাপারে জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংগঠনের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যাও ১০১ থেকে বৃদ্ধি করে ২০১ করার প্রস্তাব উঠেছে। ২০০৩ সালে সর্বশেষ স্বাচিপের নির্বাচনের সময় সংগঠনের সদস্যসংখ্যা মাত্র ২২শ’ থাকলেও বর্তমানে সদস্যসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। যদিও নতুন সদস্যদের সদস্যপদ কেন্দ্রীয় কমিটি এখনো অনুমোদন পায়নি।

স্বাচিপে ড্যাব ও জামায়াতপন্থী চিকিৎসকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করে সদস্যপদ যাচাইবাছাই চলছে। সম্মেলনের আর  একমাসের কম সময় বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন হবে কী না সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা হয়নি।

স্বাচিপের শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা। তিনি নির্বাচনের নির্দেশ দিলে নির্বাচন হবে নতুবা দলের প্রতি ত্যাগ, তিতিক্ষা ও পেশাজীবী  চিকিৎসকদের পরিচালনায় দক্ষ এমন কাউকে তিনি সভাপতি কিংবা মহাসচিব পদে মনোনীত করবেন। সম্মেলনের দিন তাদের নাম ঘোষণা করা হবে। পরে সভাপতি ও মহাসচিব পরামর্শ করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ঠিক করবেন।

তারা জানান, ২০০৩ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুহুল হককে সভাপতি মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মহাসচিব পদে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন অধ্যাপক  ডা. এম ইকবাল আর্সলান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাচিপের কয়েকজন নেতা জাগো নিউজকে বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনের সময় স্বাচিপ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছিল। কিন্তু এখন আর স্বাচিপ সরাসরি অঙ্গসংগঠন নয় সমমনা সংগঠন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তারা এর সমর্থক। স্বাচিপে সরকারি চিকিৎসক থাকায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই আসবে। স্বাচিপের সভাপতি ও মহাসচিব পদে এবার প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা চেষ্টা ও তদবির চালাচ্ছেন।

তফসিল ঘোষণা না হলেও বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। সভাপতি পদে বর্তমান বিএমএ ও স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক বিএমএ নেতা ও সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, বিএসএমএমইউ’র সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, বিএসএমএমইউ’র সাবেক ও বর্তমান দুই উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বিএমএর ঢাকা মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবদুর রউফ সর্দার ও অধ্যাপক ডা. কাজী শাহিদুল ইসলামের নামও শোনা যাচ্ছে।

অনেকের নাম আলোচনায় উঠে আসলেও নানা সমীকরণ শেষে এককালের ‘গুরু-শিষ্য খ্যাত’ সাবেক বিএমএ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও বর্তমান স্বাচিপ মহাসচিব ডা. ইকবাল আর্সলানের মধ্যে থেকেই কেউ একজন নির্বাচিত বা মনোনীত হতে পারেন।

মহাসচিব পদে বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, বিএমএর সিলেট জেলার সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ূয়া, বিএমএর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. আবুল হাশেম খান, বিএমএর কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, স্বাচিপের বিএসএমএমইউ’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

কিছুদিন আগে পর্যন্ত নাম শোনা না গেলেও কয়েকদিন যাবত সিরাজগঞ্জের সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ডা. হাবিব ই মিল্লাত ওরফে মুন্নার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহাসচিব পদে যোগ্য বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজকে জানান- তারা নেতৃত্বে পেশাদার, রাজনীতি মনস্ক, সৎ ও তথ্য-প্রযুক্তি বান্ধব নেতা চান।

এমইউ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।