ওষুধ সংকটে পোড়া রোগীদের ভোগান্তি


প্রকাশিত: ১১:০৫ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে টানা ২২ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছেন গৃহবধূ রুমা আক্তার (৩০)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মারা যান রুমা। রাজধানীর বাটারা থানাধীন বারিধারা এফ ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৯৮ বাসার বাসিন্দা আবু তাহেরের স্ত্রী রুমার শরীরের ৮০ ভাগ আগুনে পুড়ে গেছে।

স্বামীর দেয়া আগুনে নিহত রুমার বোন ফাতেমার অভিযোগ, রুমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলেও জরুরি বিভাগ থেকে রুমার ড্রেসিংসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সিল্ক ক্রিম, হার্টসল ইনট্রাভেনাস (আইভি) স্যালাইন, বেবি স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও ইনজেকশন জোটেনি।

তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকরা তাদের দিয়ে সব ওষুধপত্র বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনিয়ে এনেছেন। বোনের চিকিৎসাবাবদ ঢামেক হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার দশেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।

এ অভিযোগ শুধু ফাতেমার একারই নয়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অগ্নিদগ্ধ গাজীপুরের ছোট শিশু সিয়াম (৭) ও রানা (৪) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়ার দুর্গাপুরের রাজমিস্ত্রি সোহেল (৩৫) এর স্বজনসহ অসংখ্য পোড়া রোগীর। তারা জানান, তাদের প্রত্যেককেই চিকিৎসকরা হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে পরামর্শ দিয়েছেন। নিরুপায় হয়ে তারা সকলেই ফার্মেসি থেকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ কিনে চিকিৎসা চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার থেকে বার্ন ইউনিটে পোড়া রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক সিল্ক ক্রিম, হার্টসল স্যালাইনসহ বেশ কয়েকপ্রকার ওষুধ, ইনজেকশন ও স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বার্ন ইউনিট থেকে জরুরি ভিত্তিতে চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও স্টোর থেকে সরবরাহ নেই এবং ৩ থেকে ৪ দিন পর সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হচ্ছে।

বার্ন বিশেষজ্ঞরা জানান, যেকোনো ধরনের পোড়া রোগী বিশেষত মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য হার্টসল স্যালাইন, সিল্ক ক্রিম ও অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। প্রতিটি হার্টসল  স্যালাইন ৯০ টাকা ও সিল্ক ক্রিম ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ কিছুদিন আগ পর্যন্ত ওষুধগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করা হতো।

শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাওরাইত মধ্যপাড়ার বাসিন্দা সিয়াম ও রানা নামের দুই শিশু বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে ঢামেক বার্ন ইউনিটে আসেন। আসাদ নামে তাদের এক আত্মীয় এ পর্যন্ত তাদের দু’জনের জন্য ৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার দুর্গাপুরের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি সোহেল বিদ্যুতস্পৃষ্ট হলে শুক্রবার বিকেলে তাকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। তার স্বজনরা জানান, হাসপাতালে আসার সাথে সাথেই তাদের দিয়ে ১২শ’টাকার ওষুধ কিনিয়ে আনা হয়। সোহেলের এক স্বজন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন ডাক্তার বলেছিলেন বার্ন ইউনিটে সব বিনামূল্যে পাওয়া যায় কিন্তু বাস্তবে এসে বিনামূল্যে কোনো ওষুধ পাননি বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ন ইউনিটের একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজকে বলেন, এটি সাময়িক সমস্যা। সরবরাহ না থাকায় রোগীদের আপাতত গাঁটের টাকা খরচ করে ওষুধপত্র কিনতে হচ্ছে। আগামী ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে ওই কর্মকর্তারা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

# অগ্নিদগ্ধ রুমা মারা গেছেন

এমএইউ/এসএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।