‘করমর্দনসহ প্রচলিত কিছু অভ্যাস পরিবর্তন সময়ের দাবি’
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
দেশের আকাশ, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরে থার্মাল ও হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানারে ৯০ সহস্রাধিক যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তবে এ ভাইরাসটি নিয়ে সারাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া না গেলেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আকাশ, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আগত সকল যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা ও চিকিৎসার জন্য সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ইউনিট তৈরি রাখাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করছে। তবে সংক্রমণরোধে দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়, সম্ভবও নয় মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক গণসচেতনতা করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, করোনাভাইরাসটি ভয়াবহ ছোঁয়াচে, একজন আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রচলিত কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে শুধু করোনাভাইরাস থেকেই নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা দেখা হলেই সৌজন্যবশত হাত বাড়িয়ে দিয়ে করমর্দন করি। এ করমর্দনের মাধ্যমে খুব সহজেই যেকোনো রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে করমর্দন না করে সালাম বিনিময় করলেই সংক্রমণ ঠেকানো যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারিভাবেই করমর্দন বন্ধ রাখার ব্যাপারে প্রচার প্রচারণা হওয়া উচিত।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষসহ সকলেই অভ্যাসবশত গণপরিবহনে ভ্রমণকালে সিটে বসে হ্যান্ডেলে হাত রাখি কিংবা হাসপাতালে রোগী দেখতে গেলে বিছানার পাশে হাত রাখি। এগুলোর মাধ্যমে নীরবে ভাইরাসটি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সরা রোগীকে দেখতে এসে বেডের পাশে ঝুলে থাকা স্যালাইন ব্যাগ ধরতে গিয়ে বেডের স্ট্যান্ডে হাত রাখছে। সেখান থেকে গিয়ে আবার অন্য রোগী দেখছে। এতে ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা।
করোনাভাইরাস দেশে দেখা দিলে বিভিন্ন হাসপাতালে কোন কোন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়সহ সংশ্লিষ্ট কারা চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকবে তার আগাম একটি তালিকা করে প্রশিক্ষণ প্রদান করে তৈরি রাখার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইইডিসিআর থেকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবত), অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা, ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, কাশিতে শিষ্টাচার মেনে চলা (হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা), অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করা, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া, অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে মাস্ক ব্যবহার করুন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন ও অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
এমইউ/আরএস/জেআইএম