ফেব্রুয়ারিতে প্রকোপ কমবে করোনাভাইরাসের

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

চীনসহ বিশ্বব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগের শেষ নেই। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মোট ১৫টি দেশে ৪ হাজার ৫৯৩ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, করোনোভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিমানবন্দর, স্থল ও নৌবন্দরে সর্দি-কাশি ও জ্বর পরিমাপের জন্য স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

চীন থেকে আগত যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে কি-না এবং তথ্যকার্ডের মাধ্যমে সম্প্রতি তার বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাসের পাশাপাশি নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ ও মনিটর করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এ ভাইরাস যেন দেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর দুর্ভাগ্যবশত এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে আইসোলেশন ইউনিটে রেখে ক্লোজ মনিটরিংয়ে রেখে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম বলেছেন, সার্সের চেয়ে নোভেল করোনাভাইরাসের ক্ষিপ্রতা কম। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, কবে নাগাদ করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমবে?

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ডা. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ফেব্রুয়ারি নাগাদ এ ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাবে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে শীতজনিত আবহাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শীত কমে গরম পড়লে এ ভাইরাসের প্রকোপ অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Virus-1

সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত ‘নোভেল করোনাভাইরাস (২০১৯-এনকভ) পরিস্থিতি প্রতিবেদন-৮’ অনুসারে, চীনসহ বিশ্বব্যাপী ৪ হাজার ৫৯৩ জনের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১০৬ জন। এছাড়া ৬ হাজার ৯৭৩ জন সম্ভাব্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৯৭৬ জনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। মোট আক্রান্তের মধ্যে ৪ হাজার ৫৩৭ জনই চীনের বাসিন্দা। চীনের বাইরে বাকি ১৪টি দেশে মোট ৫৬ জনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫৬ জনের মধ্যে জাপানে ৬, কোরিয়ায় ৪, ভিয়েতনামে ২, সিঙ্গাপুরে, অস্ট্রেলিয়ায় ৫, মালয়েশিয়ায় ৪, কম্বোডিয়ায় ১, থাইল্যান্ডে ১৪, নেপালে ১, শ্রীলঙ্কা ১, মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রে ৫, কানাডায় ২, ফ্রান্সে ৩ ও জার্মানিতে ১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩২ জন মারা গেছেন। এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল হেল্থ কমিশন। এছাড়া আরও দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিকেল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।

এদিকে চীন ছাড়াও ১৮টি দেশের অন্তত ৭৮ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চীনা গণমাধ্যম সিনহুয়ায় এক বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করতে পারে।

এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ‘২০১৯-এনকভ’ বা ‘নভেল করোনাভাইরাস’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

এমইউ/এমএসএইচ/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।