করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ
চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পুরোপুরি প্রস্তুত বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে যেকোনো সময় এ ভাইরাস বাংলাদেশে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগাম সতর্কতামূলক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নো ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে রোগের ওপর নজরদারি কার্যক্রম।
চীনের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, দেশটিতে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪১ জনই মারা গেছেন। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোথাও কোথাও সেনাবাহিনীর ৪৫০ মেডিকেল স্টাফও মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, এই প্রাণঘাতী ভাইরাস চীনের সীমানা ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতেও ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ভাইরাস ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছে।
বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথে করোনাভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। নতুন এ ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে এবং ভাইরাসটি প্রতিরোধের জন্য এ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি প্রবেশপথে ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত রোগীদের স্পর্শ না করে অসুস্থতা পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সেজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিমানবন্দরের কোয়ারেন্টাইন (আক্রান্তকে আলাদাকরণ) ওয়ার্ড। পাশাপাশি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে নির্দিষ্ট রেখে সেখানে সঙ্গনিরোধ ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখা হয়েছে। প্লেনে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য ক্রুদের মাধ্যমে যাত্রীদের মধ্যে হেলথ ডিক্লারেশন ফরম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা ও জনসচেতনতা তৈরির জন্য ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত গাইডলাইনও প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত যোগাযোগের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিডিসি ও আইইডিসিআরের (রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) চারটি হটলাইন।
করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সরকারের সতর্কতামূল কার্যক্রম তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ)অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা জাগো নিউজকে জানান, গত তিন দিন ধরে চীন থেকে বাংলাদেশে আগত চারটি ফ্লাইটের (চায়না সাউদার্ন, চায়না ইস্টার্ন, ড্রাগন এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা) যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং করা হয়। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে (জ্বর, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি) এমন আটজনের রিপোর্ট আসে। এদের মধ্যে দুইজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি, ধরা পড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাস।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে যেকোনো সময়ে এ রোগটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার আশঙ্কা আছে। তাই এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত আছে।
এমইউ/এইচএ/জেআইএম