এমবিবিএস ইন্টার্নশিপ : সমালোচনার মুখে খসড়া বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার
সপ্তাহ না পার হতেই ওয়েবসাইটে মতামতের জন্য দেয়া মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণ ও ভাতা-সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ অধিশাখার উপসচিব মনিরুজ্জামান বকাউল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটের এমবিবিএস/ বিডিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণ ও ভাতা প্রদান-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালাটি অংশীজনদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়েছিল। এটি একটি খসড়া নীতিমালা, চূড়ান্ত কোনো নীতিমালা নয়। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার নিমিত্তে অংশীজনদের সঙ্গে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
যারা ইতিমধ্যে মতামত দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়, আপাতত এটি প্রত্যাহার করা হলো। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার আগে আবারও ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হবে।
গত ২৭ আগস্ট মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটের এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণ ইন্টার্নশিপ ভাতা প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯ (খসড়া) সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বিক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দেন।
তিনি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘এ কাজটি মন্ত্রণালয়ের নয়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি)।’ এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি একাধিক মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এক বছরের স্থলে দুই বছর ইন্টার্নশিপ করা হলে আন্দোলনে নামার হুমকি দেয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে উচ্চতর শিক্ষার জন্য উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের ছুটি নেয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সমালোচনার মুখে সেই প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় না বুঝে না শুনে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজেদের মতো করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা সেটি প্রত্যাহার করে যা শোভনীয় নয়।
খসড়া নীতিমালায় যা বলা হয়েছিল
প্রণীত খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী ৫ বছরের এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করার পর ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণের সময়কাল হবে দুই বছর। প্রথম বছর মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে সেই মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজের হাসপাতলে এবং দ্বিতীয় বছর সরকার/মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজ/প্রতিষ্ঠান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) কর্তৃক নির্ধারিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম বছরের প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান দ্বিতীয় বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুশীলন করবে। ইন্টার্নশিপ শেষে নিজ মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করবে।
দ্বিতীয় বছর উপজেলায় প্রশিক্ষণকালীন সরকার/ক্ষেত্রবিশেষে সিভিল সার্জন প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসন যানবাহনের ব্যবস্থা করবেন। সরকার পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য উপজেলায় আবাসন যানবাহনের ব্যবস্থা করবেন।
নীতিমালা প্রণয়নের পেক্ষাপট
দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েটদের চিকিৎসা শিক্ষার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের পেশাদার চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। এ প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে প্রশিক্ষণার্থীদের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য সক্ষম করে তোলে।
বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ ও উৎকর্ষ সাধিত হওয়ায় দেশীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের জন্য আসছেন। প্রয়োজনের তাগিদে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও ডিগ্রির জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। স্বাস্থ্য শিক্ষা সুদূরপ্রসারী টেকসই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার দেশের ও বিদেশের মেডিকেল/মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/ডেন্টাল কলেজ/প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ প্রশিক্ষণ ও ইন্টারনেট ভাতা-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে।
এমইউ/এএইচ/এমএস