ওষুধ খেয়েও কাটতে পারে বন্ধ্যাত্ব

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯
ফাইল ছবি

বন্ধ্যাত্বের সমস্যা? হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়ার কোনো সমাধান নয়। ওষুধ খেয়ে বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশিষ্ট গাইনকোলজিস্ট ডা. পল্লব গঙ্গোপাধ্যায়।

টানা দু’বছরের চেষ্টা! ব্যর্থতা, হতাশা নিত্যসঙ্গী। ক্রমে মানসিক চাপ আর মা হতে না পারার বেদনায় হাল ছেড়ে জীবনযাপনই অধিকাংশ মধ্য-নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর পরিণতি। বর্তমানে আইভিএফ মাতৃত্বের স্বাদ ফেরানোর নতুন দিশা। পুরুষদের সমস্যাতেই এ পদ্ধতিতে সমাধান সম্ভব। তবুও জটিল কিংবা ঝামেলা ভেবে এ দুর্বলতার সঙ্গে আপস করে নেয় অনেকেই।

টেস্ট টিউব বেবি নয়!
একজন মা হতে পারছেন না। তার পেছনে একাধিক কারণ হতে পারে। তবে অবশ্যই টানা দু’বছর চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব বলা যেতে পারে। তবে তার একমাত্র সমাধান টেস্ট টিউবের দ্বারা সন্তানধারণ তা কিন্তু একেবারেই নয়। চিকিৎসকের কথায়, এমন সমস্যায় মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের জন্য আইভিএফ (টেস্ট টিউব বেবি) করার প্রয়োজন হতে পারে। বাকিক্ষেত্রে আইভিএফ ছাড়াই সন্তান ধারণ সম্ভব।

বন্ধ্যাত্বের সমস্যাগুলো

ডিম্বাণু তৈরি বা অভ্যুলেশনে বাধা : এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে নারীদের অভ্যুলেশন বা ডিম্বস্ফোটন ঠিক মতো হয় না। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। এতে ডিম্বাণু ঠিকমতো উৎপাদন হয় না অথবা হলেও তার মান অত্যন্ত খারাপ হয়। ফলে সন্তানধারণ করতে পারেন না। বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যাটাই বেশি।

ফ্যালোপিয়ান টিউব ড্যামেজ : অনেক নারীর আবার ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলো বন্ধ থাকে। ফলে শুক্রাণু এ টিউবের মাধ্যমে গিয়ে ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হতে পারে না।

ইউটেরাসের স্বাস্থ্য খারাপ বা ইম্প্যান্টেশনে অসুবিধা : এক্ষেত্রে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু একস্থানে পৌঁছলে বা জাইগোট তৈরি হলে তা ইউটেরাসের ঝিল্লিতে ঠিকমতো লেগে থাকতে পারে না। ফলে প্রেগন্যান্সিতে বাধার সৃষ্টি হয়।

এন্ডোমেট্রিওসিস : ইউটেরাসের ভেতরের লাইনিংকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলা হয়। কোনো কারণে ওভারির মধ্যে বা ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে এ এন্ডোমেট্রিয়াম গ্রো করলে তাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিওসিস। এ সমস্যা থাকলেও সন্তানধারণে সমস্যা দেখা দেয়।

শুক্রাণুর সমস্যা : এক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাণুর মান খারাপের ফলে সঙ্গিনী মা হতে পারেন না।

আইভিএফ ছাড়াও ওষুধে সমাধান!

নারীদের ডিম্বাণুর মান খারাপের পেছনে দায়ী বর্তমান জীবনযাপন। বেশি বয়সে সন্তানধারণের প্রচেষ্টা, পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে নানা পরিবর্তন এমন সমস্যার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ, থাইরয়েড, ডায়াবেটিস কিংবা মানসিক চাপে এমন সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।

এক্ষেত্রে প্রাথমিক সমাধান ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যতালিকা থেকে ফ্যাট জাতীয় খাবার বাদ দেয়া। মানসিক চাপ কমাতে হবে। এ ছাড়া যে রোগগুলো রয়েছে সর্বপ্রথম সেই রোগ ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

এ ছাড়া অভ্যুলেশন ঠিকমতো হওয়ার জন্য ক্লমিফিন বা লেট্রোজোল জাতীয় ওষুধ দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা হয়; যা শরীরের এফএসএইচ বা ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এ হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়। ফলে ডিম্বাণু তৈরি বা অভ্যুলেশন ভালো হয়। যাদের ওষুধ খেয়ে কাজ হয় না তাদের জন্য এফএসএইচ হরমোন ইনজেকশন একদিন অন্তর দেয়া হয়। যা ডিম্বাণু তৈরি করতে সাহায্য করে। তারপর এইচসিজি (হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রফি) হরমোন ইনজেকশন দিয়ে অভ্যুলেশন ঘটানো সম্ভব।

প্রয়োজনে অপারেশন

ইউটেরাস ইমপ্ল্যান্টেশনের সমস্যার কারণ অ্যাডিনোমাইসিস, ইউটেরাসে পলিপ বা ইউটেরাসের ভেতরে ইন্ডোমেট্রিয়াল ক্যাভিটির ভেতরে কোনো ফাইব্রয়েডের উৎপত্তি। অনেকের ক্ষেত্রে সাইনেকিয়া অসুখ থাকলে বা ইউটেরাসের অভ্যন্তরীণ দেয়াল পরস্পরের সঙ্গে সেঁটে গেলে এক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে কিংবা অপারেশন করে সমাধান করা সম্ভব। পলিপ, ফাইব্রয়েড থাকলে প্রয়োজনে তা কেটে বাদ দিয়ে তারপর তিন-চার মাস ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে স্বাভাবিক গর্ভধারণ সম্ভব। এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে কারও ওষুধ, কারও অপারেশন দরকার। কখনও আবার আইভিএফও করার প্রয়োজন হয়।

ফ্যালোপিয়ান টিউব দুটিই বন্ধ থাকলে বা ড্যামেজ হলে তা ল্যাপারোস্কপি করে বোঝা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আইভিএফই একমাত্র সমাধান। এ ওষুখের মূল কারণ সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেট ডিজিজ। পুরুষ বন্ধ্যাত্বে বা শুক্রাণুর সমস্যায় আইভিএফই সমাধান।

এনডিএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।