৯০ ভাগ লুপাস রোগী কম বয়সী নারী
বিশ্ব লুপাস দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
সেমিনারে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম, রিউমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন এলএফবি-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এন আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এলএফবি-এর মহাসচিব ফারহানা ফেরদৌস। আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও ডা. মো. আবু শাহীন, এলএফবি-এর সদস্য কামরুন্নাহার কলি, আফসানা রিফাত মিতি।
সেমিনারের পর এসো হাতে হাত ধরি, রুখতে লুপাস ঐক্য গড়ি- স্লোগানে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগে ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম লুপাস রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এ রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে লুপাস নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সেমিনারে বক্তারা জানান, লুপাস বা এসএলই মানে সিস্টেমিক লুপাস ইরাথেমেটোসাস বা এসএলই রোগে রোগীর রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেম নিজের শরীরে বিরুদ্ধে কাজ শুরু করে। এ রোগকে সিস্টেমিক বলা হয়, কারণ এটি শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম (যেমন: চর্ম এমএসকে সিস্টেম, স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র, কিডনি ইত্যাদিকে) আক্রমণ করে।
তারা আরও জানান, ইরাথেমেটোসাস শব্দটির অর্থ ত্বকের কিছু অংশ লাল হয়ে যাওয়া। লুপাস গ্রীক শব্দ, যার অর্থ ‘নেকড়ে’। যেহেতু এই রোগের আক্রমণ অনেকটা নেকড়ের আক্রমণের মতো আকস্মিক, তাই একে ‘লুপাস’ বলা হয়। এ রোগে শরীরের চর্ম, স্নায়ুতন্ত্র, রক্ত সঞ্চালন তন্ত্র, কিডনি ইত্যাদি আক্রমণ করে। এখনও পর্যন্ত এ রোগের সঠিক কোনো কারণ সম্পূর্ণ জানা যায়নি।
বক্তারা জানান, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২০ থেকে ১৫০ জনের লুপাস হতে পারে। শতকরা ৯০ ভাগ লুপাস রোগী কম বয়সী নারী, যাদের শতকরা ৬৫ ভাগ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ৫৫ এর মধ্যে, শতকরা ২০ ভাগ ১৬ বছরে নিচে এবং শতকরা ১৫ ভাগ ৫৫ বছরের বেশি নারী।
তারা জানান, ছেলেদের এ রোগের প্রকোপ মেয়েদের চেয়ে অনেক কম। লুপাস রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- দীর্ঘ দিন ধরে জ্বর, কিন্তু সঠিক কারণ খুঁজে না পাওয়া, নাকের দুই পাশে লাল চাড়া হওয়া, যা দেখতে প্রজাপতির পাখার মতো, শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল রঙের অথবা গোল গোল চাকা হওয়া, অতিরিক্ত চুল পড়া, রক্ত শূন্যতা, মুখের তালুতে ঘা হওয়া, কিছু ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা পানিতে হাত রাখলে হাতের রঙের পরিবর্তন হওয়া (প্রথমে সাদা, তারপর নীল, তারপর লাল), ক্লান্তি বা অবসাদ লাগা ইত্যাদি।
এই রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- শ্বাসকষ্ট হওয়া, মুখে, শরীরে বা পেটে পানি আসা, ডায়রিয়া, বমি অথবা পেট ব্যথা হওয়া, বার বার বাচ্চা নষ্ট হওয়া, কোনো একটি পা ফুলে গিয়ে ব্যথা হওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ, অজ্ঞান হয়ে হওয়া ইত্যাদি। লুপাস রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূলের কোনো ওষুধ না থাকলেও যথাযথ চিকিৎসায় এই রোগ খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেকে কোনো উপসর্গবিহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন ভাল থাকতে পারে বলে বক্তারা জানান।
এমইউ/এমএসএইচ/জেআইএম