তিন সন্তান গর্ভধারণে ব্যতিক্রম ঘটেছে পপি সাহার


প্রকাশিত: ০৭:১৯ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মাতৃগর্ভে একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের সন্তান গর্ভধারণে সাধারণত প্ল্যাসেন্টা (গর্ভফুল) ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে মানিকগঞ্জের গৃহবধূ পপি সাহার ক্ষেত্রে। গত রোববার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রাজধানীর শাহজাহানপুরের প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালে এক সঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দেন তিনি। দুটি কন্যা সন্তান-যাদের ওজন যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪ ও ২ দশমিক ৩ কেজি এবং পুত্র সন্তানের ওজন ৩ কেজি। একটি গর্ভফুলেই ছিল সব সন্তান।

রোববার বিকেলে প্যান প্যাসিফিক হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মুক্তি রানী সাহা সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতকদের ভূমিষ্ট করান। বর্তমানে গর্ভধারিনী মা ও তার তিন সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।

পারিবারিক সূত্র জানা গেছে, একসঙ্গে তিন সন্তান হওয়ায় এখন গোটা পরিবারে খুশির জোয়ার বইছে। কিন্তু সন্তান প্রসবের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ভীষণ টেনশনে সময় কেটেছে তাদের। তারা জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে প্রসব পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গর্ভে একসঙ্গে তিন সন্তান-এমন খবর শোনার পর থেকে তাদের প্রতিটি দিন, ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ড কেটেছে প্রচন্ড টেনশনে। পপি সাহার ওজন বেশি থাকায় বিপদ হতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল। যখন তার অস্ত্রোপচার করা হয় তখন ওজন ছিল ১১০ কেজি। এখন কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন সবাই।

গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মুক্তি রানী সাহা জাগো নিউজকে জানান, ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের সন্তান গর্ভধারণ করলে সাধারণত প্ল্যাসেন্টা (গর্ভফুল) ভিন্ন ভিন্ন হয়। কিন্তু তার (গৃহবধূ পপি সাহা) ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। একটি গর্ভফুলেই সব সন্তান ছিল।

Maজানা গেছে, এ দম্পত্তির ঘরে আগে থেকে ছয় বছর বয়সি একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু সে কথা বলতে পারে না। তাই আরেকটি সন্তানের আশায় তারা গত পাঁচ বছর যাবত সন্তান ধারণের (কনসিভ) জন্য অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। চরম হতাশ হয়ে যখন হাল প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিলেন তখনই গৃহবধূর সামনে আর্শীবাদ হিসেবে উপস্থিত হন ডা. মুক্তি রানী সাহা।

মুক্তি রানী সাহা জানান, তিনি শুক্রবার ছুটির দিনে মানিকগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখতে যান। সেখানেই একদিন এ্ই গৃহবধূ তার পরামর্শ নিতে আসেন। গর্ভধারণের জন্য তার পরামর্শ ও ওষুধ সেবন করে পাঁচমাস পর সে কনসিভ করেন।

প্রেগন্যান্সির ২/৩ মাসের সময় স্থানীয় একটি প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাকে জানান, তার গর্ভে দুটি সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে পাঁচ মাসের সময় মুক্তি রানীর পরামর্শে ঢাকার একটি হাসপাতালে বিশেষ ধরনের পরীক্ষায় জানা যায়- তার গর্ভে তিনটি সন্তান রয়েছে। দুটি কন্যা সন্তান বোঝা গেলেও অন্যটি বোঝা যাচ্ছে না।

এমন খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গৃহবধূ। আগের সন্তানটি কন্যা ও বোবা হওয়ায় এমনিতেই কিছুটা মন খারাপ ছিল তদোপরি গর্ভের তিনটি সন্তানের তিনটিই যদি মেয়ে হয় এ আশঙ্কায় মুষড়ে পড়েন তিনি। কিন্তু স্বামী গোপাল সাহা তাকে সান্ত্বনায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শে সাহস পান গৃহবধূ পপি সাহা।

মুক্তি রানী সাহা আরো জানান, যখন তার ৩৪ সপ্তাহ তখন থেকেই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন গৃহবধূ। কারণ তার ওজন ছিল খুবই বেশি। কিন্তু তিনি তাকে ধমকে, ভয় দেখিয়ে ও সাহস জুগিয়ে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। অতঃপর গত রোববার বিকেলে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিন সন্তান জন্ম দেন পপি সাহা।

ডা. মুক্তি রানী জানান, তিনটি শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে, তারা হাত পা ছুঁড়ছে, নড়াচড়া করছে, কাঁদছে, হাসছে। প্রস্রাব ও পায়খানাও স্বাভাবিক। তবে তারা মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না। বিকল্প শিশু খাদ্য দেয়া হচ্ছে।

এমইউ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।