শিশুর ব্যাকটেরিয়াল ম্যানেনজাইটিস : বিলম্বে মহাবিপদ


প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ৩০ আগস্ট ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন ৪৩দিন বয়সী শিশু আবদুল্লাহ। জম্মের পর পরই জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর দুইদিন পর থেকে যোগ হয় জ্বরের সাথে খিঁচুনি ও বমি। এক পর্যায়ে চোখ মুখ উল্টে অচেতন হয়ে পড়ে। সেই থেকে আর চোখ মেলে তাকায়নি এই নবজাতক।

শিশুটির মা কান্নাজড়িত কন্ঠে চিকিৎসকের কাছে তার সুস্থতার কথা জানতে চান। চিকিৎসক তাকে জানান, আবদুল্লাহকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বিলম্ব হয়েছে। তাই সুস্থ হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

গত ২৫ আগস্ট এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইফ্ফাত আরা শামসাদ জানান, শিশুটি ব্যাকটেরিয়াল ম্যানেনজাইটিস রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মস্তিস্কের বহিরাবরন ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমজনিত কারণে প্রদাহ হয়। এ রোগের উপসর্গ হলো চার পাঁচদিন ধরে শিশুর জ্বর থাকে, সেই সাথে বমি, মাথাব্যাথা ও  খিঁচুনি হয়। কোনো কোনো শিশু খিঁচুনির এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ে।

আক্রান্ত শিশুদের অনেকেই বধির, বিকলাঙ্গ এমনকি মারাও যায়। তবে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় বলে তিনি জানান।

জানা যায়, শুধু আবদুল্লাহই নয় তার বয়সী অনেক শিশুই ব্যাকটেরিয়াল ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। নবজাতক থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সী শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢামেক শিশু বিভাগের ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিমাসে কমপক্ষে অর্ধশত শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। বহু বছর যাবত শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তবে আগের তুলনায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমেছে দাবি করে চিকিৎসকরা জানান, শিশুদের ম্যানেনজাইটিস রোগের সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এইচআইবি (ঐরন) হিমোফাইরাস ইনফ্লুয়িঞ্জি টাইপ ভাইরাস ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।

শিশুর জম্মের এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তিনবার এই একটি মাত্র ভ্যাকসিনের মাধ্যমে একসাথে পাঁচটি (ডিপথেরিয়া, টিটেনাস পারটোসিস (ডিপিটি), হেপাটাইটিস বি ও এইচআইবি) রোগ প্রতিরোধ হবে। ইতিমধ্যেই এর সুফল পেতে শুরু করেছে শিশুরা।

ঢামেক শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইফ্ফাত আরা শামসাদ জাগো নিউজকে জানান, নবজাতক থেকে ১২ বছর বয়সী যে কোনো শিশু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াল উভয় ধরনের ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাল ম্যানেনজাইটিসে শিশুর জ্বর ও খিঁচুনি হলে তেমন বড় ধরনের ক্ষতি হয় না। কয়েকদিনের মধ্যে এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়াল ম্যানেনজাইটিসে শিশুর জ্বর, খিঁচুনি, বমি হয়। অনেক সময় শিশু অচেতন হয়ে পড়ে।

এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ডা. ইফ্ফাত আরা শামসাদ জানান, মস্তিস্ক থেকে শিরদাড়ায় নির্গতত এক ধরনের রস (সেলিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড) পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই শিশুটি ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া ম্যানেনজাইটিসে আক্রান্ত তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। এছাড়া মস্তিস্কের আবরনে প্রদাহজনিত কারণে অনেক সময় ইনফেকশন মস্তিস্কের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের নাম অ্যানকেফালাইটিস। অ্যানকেফালাইটিসে আক্রান্ত শিশুও ঢামেক শিশু বিভাগে ভর্তি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এমইউ/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।