অনবরত রক্তক্ষরণ : জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে শিশু সাদমান কেসপার


প্রকাশিত: ০৮:১৯ এএম, ২৬ আগস্ট ২০১৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সাড়ে চার বয়সের ছোট শিশু সাদমান কেসপার। গত এক সপ্তাহ ধরে ক্ষুদে এই শিশুটির শরীর থেকে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

রক্তশূন্যতার ফলে তার দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও রক্তচাপ কমে গেছে এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখছেন তার স্বজনরা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে মাত্র কিছুদিন আগেও শিশু কেসপার ছিল ভীষন হাসিখুশি। দিনভর এঘর-ওঘর দুষ্টুমি করে ঘুরে বেড়াতো। দৌড়ঝাপ আর দুরন্তপনায় পরিবারের সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। কিন্তু অজানা এক অসুখে নির্জীব, নির্লিপ্ত ও শান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে সে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের একজন খ্যাতনামা সার্জন কেসপারের পেটে অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচার পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টা রক্তপাত বন্ধ থাকলেও আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রয়োজনীয় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও রক্তপাতের সঠিক কারণ নির্নয় করতে ব্যর্থ হয়ে ওই সার্জন কেসপারকে অধিকতর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাকে ঢাকায় এনে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে তাকে বিএসএমএমইউ সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল হকের অধীনে ভর্তি করা হয়।

কেসপারের সুষ্ঠু চিকিৎসার্থে অধ্যাপক শফিকুল হককে প্রধান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়ে ৮ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুল হক বুধবার দুপুর ১২টায় জাগো নিউজকে জানান, কেসপারের শরীর থেকে অনবরত রক্তপাত হচ্ছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। কি কারণে শরীরের কোন অংশ থেকে রক্তপাত হচ্ছে তা জানতে মেডিকেল বোর্ড সদস্যদের পরামর্শ মতো সাত থেকে আট ধরনের রক্ত পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রামের ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন অপু ও ঝুমুর দম্পত্তির একমাত্র সন্তান কেসপার। বাবা পেশায় একজন স্টেইন স্লাস ডিজাইনার ও ট্রেকার, মা গৃহবধূ।

বুধবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অপু জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে হঠাৎ করে কেসপারের পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াতে থাকেন তিনি। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় গত ১৯ আগস্ট তাকে চট্টগ্রামের রয়েল হাসপাতালের শিশুসার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. জাফরুল হান্নানের অধীনে ভর্তি করান। ২৫ আগস্ট তার পেটে অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও কোথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা নির্নয় করতে পারেননি। অস্ত্রোপচারের পর ৩৬ ঘণ্টা তার রক্তপাত বন্ধ থাকলেও আবার রক্তপাত শুরু হয়। এ পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের দেয়া ১২/১৩ব্যাগ রক্তে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসার্থে তার লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

বুধবার বিএসএমএমইউ’র সি ব্লকের পঞ্চম তলায় নিশাত জামান অমি নামে কেসপারের বাবার এক বন্ধু ট্রেকার জানান, কেসপার খুবই প্রাণবন্ত একটা ছেলে। তার বাবা যখন পাহাড়ে ট্রেকিং করতে যেতে প্রস্তুতি নিতো তখন সে বাবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সামনে এগিয়ে দিতো। কাছাকাছি কোথাও ট্রেকিং এ গেলে বাবার সঙ্গী হতো।

তিনি জানান, অপু লিভিং উইথ ফরেস্ট ও ট্যুরিজম বিডি নামে দুটি ওয়েভসাইটের এডমিনিস্ট্রেটর। ২০০২ সাল থেকে ট্রেকিং করেন। কেসপার অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার বন্ধুবান্ধবরা সার্বক্ষণিক পাশে পাশে ছায়ার মতো থাকছেন।  তারাই কেসপারের জন্য ‘ও পজিটিভ’ রক্তদান করেছে। এ পর্যন্ত ১৩/১৪ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে।

অধ্যাপক শফিকুল হক জানান, মানবদেহে সাধারণত প্রতি ১০০ এমএল রক্তে ১০ গ্রাম হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থাকে।  অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে ক্যাসপার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫ ও ১২ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে অবস্থানকালে রক্তপরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৯। এ বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে রক্তচাপ ৯০/৬০ থাকার কথা থাকলেও কেসপারের রক্তচাপ মাত্র ৭০/৪০।

একই স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ৯০ থেকে ১০০ কিন্তু তার রয়েছে ১২০। শরীরের কোন অঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা নির্ণয়ের লক্ষ্যেই মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে বলে জানান তিনি।

আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, পেডিয়েট্র্রিক গ্যাস্ট্রোএন্ট্রিওলজি বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বজলুল করিম, পেডিয়েট্রিক হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ টি এম আতিকুর রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. কাজি জহিরুল হাসান ও ডা. শাহিনুর।

# রক্তরক্ষণ আপাতত বন্ধ : কেসপারের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল
# কেসপারের দেহে সফল অস্ত্রোপচার : আইসিইউ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন!
# শারীরিক অবস্থার অবনতি : কেসপারকে আইসিইউতে স্থানান্তর
# বিএসএমএমইউর আইসিইউতে চিকিৎসা না পেয়েই কেসপারের মৃত্যু!

এমইউ/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।