ডায়াবেটিসে প্রতি তিনজনে একজন অন্ধত্বের ঝুঁকিতে
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) হিসাবে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ডায়াবেটিক রোগীর প্রতি তিনজনে একজন ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্বের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অসচেতনতার অভাবে ডায়াবেটিস আছে এমন লোকজনের মধ্যে অর্ধেকই জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালে যৌথ উদ্যোগে বুধবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরি’ শীর্ষক প্রকল্প উদ্বোধন ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তারা এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরে মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কে আজাদ খান।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের সঞ্চালনায় এবং কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. সাইফুদ্দিন আহমেদ, সিবিএইচসির লাইন প্রতিনিধি, এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর নূর মোহাম্মদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এডিজি প্রফেসর এএইচএম এনায়েত হোসেন প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন আইএনজিও ফোরাম ইন আই হেলথ ও বাডাসের সহযোগীবৃন্দ এবং স্বনামধন্য চিকিৎসকগণ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সরকারি একটি জরিপে (স্টেপস ২০১৮) দেখা গেছে, দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৬ লাখের বেশি মানুষই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ ছাড়া আরও কয়েক লাখ শিশু জন্মগতভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০.১ মিলিয়ন, যাদের ২.৫ মিলিয়ন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত। পাশাপাশি, প্রতিবছর বাংলাদেশে ০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার নতুন করে ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, অসচেনতার কারণে ডায়াবেটিকে আক্রান্ত শিশুদের কেউ কেউ দৃষ্টিহীন আবার অনেকে ভুগছে চোখের মারাত্বক জটিলতায়। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও সুচিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ, বগুড়া, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং দেশব্যাপী বিস্তৃত ৪০০ কমিউনিটি ক্লিনিককে যুক্ত করে একটি শক্তিশালী রেফারেল নেটওয়ার্ক তৈরির যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, তাকে আমি স্বাগত জানাই এবং সরকারী সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে অর্ধেকই অবগত নন যে তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। আরেকটি আশঙ্কার কথা হলো, পাঁচজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে চারজনেরই বসবাস নিম্নআয় ও মধ্যআয়ের দেশগুলোতে। অসচেতনতা ও প্রচারের অভাবে এখনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিরা চোখের চিকিৎসা করাচ্ছেন না। অথচ ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ধ হাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কে আজাদ খান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি চোখের চিকিৎসায় এই কর্মসূচি গ্রহণের জন্য অরবিসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশব্যাপী ৫৪টি বাডাস হাসপাতালে ডায়াবেটিস রোগীর চক্ষুপরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে চক্ষু চিকিৎসাসেবাকে সম্বন্বয় করা জরুরি। যেন ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা একই সাথে চোখের পরীক্ষা করাতে পারেন। এতে করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এমইউ/বিএ