নিউমোনিয়ায় মৃত্যুরোধে কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন আইসিডিডিআরবির
তীব্র নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুরোধের অত্যন্ত কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপকরণ উদ্ভাবন করেছেন আইসিডিডিআর’বির গবেষকরা। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত সহজলভ্য ও সস্তা বাবল সিপিএপি (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার) পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে নিউমোনিয়ার রোগীর মৃত্যুহার শতকরা ৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব। এটি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টেরও প্রয়োজন পড়বে না।
হাতের কাছে খুবই সহজলভ্য স্যাম্পুর খালি বোতল ও টিউবের সাহায্যে এ যন্ত্র তৈরি করা যায়। বিখ্যাত বৃটিশ মেডিকেল জার্নাল ল্যানচ্যাটে আইসিডিডিআর’বির কার্যকর এ গবেষণার ফলাফল চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। দামে সস্তা নতুন এ উদ্ভাবন মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আইসিডিডিআর’বির ঢাকা হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের ক্লিনিক্যাল প্রধান ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ড. মো. জুবায়ের চিশতি জাগো নিউজকে জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ফুসফুসে প্রদাহ হয়। এ প্রদাহের ফলে ফুসফুসের কিছু অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত ও চুপসে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশে প্রচলিত পদ্ধতির সিলিন্ডারের মাধ্যমে যে অক্সিজেন থেরাপি দেয়া হয় সে অক্সিজেন ফুসফুসের চুপসে যাওয়া অংশকে পুনরায় খুলে দিতে পারে না। কিন্তু বাবল সিপিএপি পদ্ধতিতে চুপসে যাওয়া ফুসফুসকে খুলে দিতে পারে।
তিনি জানান, আইসিডিডিআরবি ও দি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড হেলথ অ্যাট দি ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের একদল গবেষক ২০১১ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত) আইসিডিডিআরবির ঢাকা হাসপাতালে মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী ২২৫ শিশুর ওপর গবেষণা চালান।
শিশুদের তিনটি স্টাডি গ্রুপে (বাবল-সিপিএপি অক্সিজেন থেরাপি গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড লো অক্সিজেন থেরাপি গ্রুপ ও হাই ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি গ্রুপ) এ ভাগ করে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় বাবল-সিপিএপি অক্সিজেন থেরাপি সবচাইতে বেশি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়।
চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বিশ্বে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর পাঁচ বছর বয়সী ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়। তন্মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ শিশুর নিউমোনিয়াজনিত কারণে মৃত্যু হয়। মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এক সময় নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনকে প্রধান চিকিৎসা মনে করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে গবেষকরা দেখতে পান শতকরা ৯০ ভাগ শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সিজেনকে জরুরি ওষুধের তালিকাভুক্ত করে নিউমোনিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্য স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেনের মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রদানের মাধ্যমে শিশুর চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
আইসিডিডিআরবির নতুন এ উদ্ভাবিত বাবল সিপিএপি পদ্ধতিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত পদ্ধতির চেয়ে ভালো বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আইসিডিডিআরবির গবেষক ডা. চিশতি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত পদ্ধতিতে চিকিৎসায় ব্যর্থতার শতকরা হার ২৪ হলেও তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে এ হার মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশকৃত পদ্ধতিতে শতকরা মৃত্যুহার ছয় ভাগ হলেও নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে মৃত্যুহার মাত্র শতকরা চার ভাগ।
আইসিডিডিআরবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জ্যেষ্ঠ গবেষক অধ্যাপক ট্রেভর ডিউক বলেন, এ পদ্ধতিকে ছোট ছোট হাসপাতালে কীভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায় এ জন্য আরো অধিক গবেষণা প্রয়োজন। এ গবেষণা কার্যক্রমে অর্থায়ন করেছে অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট।
এমইউ/বিএ