স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
সেই সঙ্গে জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক থাকায় বাজেট বরাদ্দে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর কলাবাগানে পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।
‘অপ্রতিরোধ্য ক্যান্সার ও হৃদরোগ : পরিবেশ বিপর্যয় : করণীয়' শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে পবা।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ইনষ্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্র অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন এর হিসাবে বলা হয়েছে ২৫০টি রোগ ও বিভিন্ন ধরনের জখমে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯০ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। যা ২০৪০ সালে বেড়ে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ জন হবে। অর্থাৎ মৃত্যু বাড়বে ৩২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ল্যানচেটে বলা হয়, ২০১৩ সালে ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে, ১ লাখ ৬ হাজার হার্ট অ্যাটাকে ও ২৮ হাজার ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদরোগে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। এছাড়া ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণের একটি হৃদরোগ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয় তার ৬৭ শতাংশই মারা যান অসংক্রামক রোগে। ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৮.৭ শতাংশের মধ্যে অন্তত একটি অসংক্রামক রোগের (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস) ঝুঁকি, ৭৭.৪ এর মধ্যে অন্তত দুটি ঝুঁকি এবং ২৮.৩ শতাংশের মধ্যে অন্তত তিনটি ঝুঁকি রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশে ১২ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর ২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ মানুষ মারা যায়।
জাপানের জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ১ কোটি ২৭ লাখ মানু্ষের দেহে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা নিওপ্লাসিয়া নামে পরিচিত। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকবে ২ কোটি ১৪ লাখ মানুষ।
বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক প্রকাশনা অনুসারে নিরাপদ খাদ্য,পরিবেশ সংরক্ষণ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ, কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৯টি নীতিমালা এবং ১৭টি আইন রয়েছে। কিন্তু এসব আইন প্রয়োগের যথেষ্ট গুরুত্ব না পাওয়ায় জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ অবস্থায় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য বিভাগ গঠন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি প্রনয়ন, এ নীতিকে সব আইন, নীতির উপর প্রাধান্য দেয়া, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ্য রাখতে মাঠ, পার্ক, হাঁটার সুব্যবস্থা, পথচারীদের চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রদান।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী. মো. আব্দুস সোবহান, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সহ-সাধারণ সম্পাদক অলিভা পারভিন, ডাব্লিওবিবি ট্রাস্টের সহ-প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান প্রমুখ।
এএস/এমএমজেড/এমএস