হৃদরোগ হাসপাতালে এক মাস ধরে সব অস্ত্রোপচার বন্ধ
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ওপেন হার্ট, ভাসকুলার ও হার্ট বাল্বের সমস্যায় আক্রান্ত অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন এমন বহু রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে এসে ফেরত যাচ্ছেন। ওটির পাশে স্টেপ-১ আইসিইউটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ থাকা ওটিগুলো কবে নাগাদ আবার চালু হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ওটি বন্ধ থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, হৃদরোগের বিশেষায়িত এই হাসপাতালের মোট ছয়টি ওটিতে আগে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮০টি থেকে ১০০টি অস্ত্রোপচার হতো। অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় সরকারি এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের খরচ অপেক্ষাকৃত কম। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীদের কাছে এই হাসপাতালই ছিল শেষ ভরসা। মাত্র ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে ওপেন হার্টসহ বিভিন্ন সার্জারি করা যেত এখানে।
আকস্মিকভাবে ওটি বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রোগীর স্বজনরা বলেছেন, কোনো প্রকার বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে এভাবে বিনা নোটিশে শতাধিক মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা উন্নয়নের গুণগান গাইতে ব্যস্ত।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, একমাসেরও বেশি সময় ধরে ওটি বন্ধ থাকায় হাসপাতালের একশ্রেণির অসাধু চিকিৎসক ছাড়ের কথা বলে দরিদ্র রোগীদের মিরপুর ও লালমাটিয়ার দুটি বেসরকারি হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। ওই দুটি হাসপাতালে ছাড়কৃত অর্থে (২ লাখ টাকার অস্ত্রোপচার দেড় লাখ টাকায়) করানো হচ্ছে। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের অসাধু ওই চিকিৎসকরা এই দুটি হাসপাতাল থেকে রোগী রেফার করার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের কমিশন পাচ্ছেন!
ভিন্ন একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইনডোরে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের গা বাঁচাতে মুমূর্ষু অস্ত্রোপচারের রোগীদের হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করে রাখার ফলে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ব্যবস্থায় মৃত্যুঝুঁকি বেড়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক অবশ্য দাবি করেছেন, হাসপাতালের ১০ তলা ভবনের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ার কারণে কিছুদিনের জন্য কয়েকটি ওটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে ভাসকুলার ক্যাজুয়েলটি ওটি এবং মূল আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) চালু রয়েছে। তবে ওটিগুলো বন্ধ থাকার ফলে রোগীদের সাময়িক সমস্যা হচ্ছে বলে তারা স্বীকার করেন।
ওটি বন্ধ থাকার ব্যাপারে জানতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে মোবাইলে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
এমইউ/জেডএ/জেআইএম