ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ অবৈধ!
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতাল অবৈধ পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চেয়ারপারসন জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুনকে সভাপতি ও শিশু হাসপাতালের পরিচালককে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ‘ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮’ অনুযায়ী গঠন করা হলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশ-২০০৮ জারি করা হলেও তা পরবর্তীতে নবম জাতীয় সংসদে আর পাস হয়নি।
একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদে মোট ১২২টি অধ্যাদেশ উত্থাপিত হয়। উত্থাপিত অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে ৬৮টি বাতিল হয়। তার মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতাল অধ্যাদেশটিও (যার ক্রমিক নম্বর ৫৮) রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিশু হাসপাতালের একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বাতিল হওয়া অধ্যাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত বর্তমান ব্যবস্থাপনা বোর্ড আইনগতভাবে অবৈধ।
তারা জানান, ২০০৮ সালের পর কমপক্ষে চার দফায় ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠিত হলেও সে সকল বোর্ড ‘কথিত’ অধ্যাদেশ অনুযায়ী গঠিত হয়নি! ওই সময় ব্যবস্থাপনা বোর্ডে সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৮ থেকে সর্বোচ্চ ২২/২৩ জন সদস্যও থাকতেন। যেকোনো পেশার অনেক যোগ্য ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ পেতেন।
নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৮ সালের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বোর্ড ম্যানেজমেন্টের সদস্য সংখ্যা ১০ জন করা হয়। চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিব ছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে সুনাম অর্জনকারী দুই ব্যক্তি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ডা. শারফিুদ্দিন আহমেদ ও দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবুল কাশেম হুমায়ুন), চিকিৎসা পেশায় সুনাম অর্জনকারী দুই চিকিৎসক বিশেষ করে শিশু বিশেষজ্ঞ (হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ও বিএসএমএমইউর সাবেক প্রোভিসি ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্ল্যা), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক। ২০১৬ সালের আগে যারা ছিলেন তাদের বাদ দেয়ার জন্য অধ্যাদেশের দোহাই দিয়ে ওই কমিটি গঠিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিশু হাসপাতালের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জানান, অধ্যাদেশ পাস না হওয়ায় বর্তমান কমিটি অবৈধ।
আর অধ্যাদেশ পাস হলেও অধ্যাদেশে বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী বোর্ড গঠিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন শিশু বিশেষজ্ঞ নন, তিনি একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র চিকিৎসকরা বর্তমান অবৈধ বোর্ড ভেঙে নতুন করে বোর্ড গঠনের দাবি জানান।
এমইউ/বিএ