শিশু-বয়স্কদের ভিড় সেন্ট্রাল হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৯ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীর ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের নিচতলার রিসিপশনের সামনে যারা বসেছিলেন তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই ছিল বড় ব্যাগ, কাথা-বালিশ। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কারও ২ দিন কারও আবার ৩ দিন ধরে জ্বর। কারও এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা বেশি ছিল। এদের অধিকাংশই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। অপেক্ষা করছেন ভর্তির জন্য। কেউ কেউ ডেঙ্গু হয়েছে কি না জানতে এসেছেন।

সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেখা গেল এ চিত্র। হাসপাতালের নিচে বসে থাকা রিয়াহিন ফারজানা নামে এক গৃহিণী বললেন, শরীর খুবই দুর্বল। ৩ দিন ধরে চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিকে গিয়ে টেস্ট করিয়ে দেখলাম ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। তাই এখানে ভর্তি হতে আসলাম।

ফারজানার মতো প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসছেন। জুলাই-আগস্ট মাসে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বর্তমানে কিছুটা কমেছে। তবে এ হার শূন্যে আসতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানালেন সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন ফ্লোরের ওয়ার্ড এবং কেবিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের কাতরানোর চিত্র। কারও হাতে স্যালাইন চলছে, কেউ রক্ত নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসারত এক রোগী জানালেন, ৭ দিন ধরে এখানে আছি। এক রুমে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। অর্ধলাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। দোয়া করি এমন রোগ যেন আর কারও না হয়। আর সরকারের উচিত ডেঙ্গুর মতো রোগ হলে জনগণের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়। বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ এ দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন আইসিইউতে আছেন। এখন পর্যন্ত এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন নারী মারা গেছেন।

centeral

সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ড. আতিয়া বেগম জানান, এখানে চিকিৎসা নেয়া অধিকাংশ রোগীই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু যাদের ডেঙ্গুর সঙ্গে হার্ট, ফুসফুস কিংবা গ্যাস্টিকের সমস্যা থাকে তাদের সেরে উঠতে একটু সময় লেগে যায়। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নেয়া ২০ ভাগ রোগী গুরুতর অবস্থায় আসায় তাদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে তাদের সবাই সেরে উঠছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিষয়ে তিনি বলেন, গতবছর চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ভর্তি হয়েছিলেন, ডেঙ্গু রোগী তেমন ছিল না। এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গতবারের তুলনায় ৪ গুণ বেড়েছে।

স্থাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ২ হাজার ৭৬৯ জন। মারা গেছেন ৮ জন। তবে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের অধিকাংশ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেল, ভর্তি হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১০ বছরের নিচে এবং ৪০-৪৫ বছরের উপরে।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনচার্জ অ্যান্ড কনসালটেন্ট ডা. সুজিত কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া অধিকাংশই ছোট বাচ্চা এবং বয়স্করা। এ ছাড়াও আক্রান্তরা অনেকেই অন্যান্য অসুখে ভুগছে। তাই তাদের সারতে একটু সময় লেগে যাচ্ছে।

এআর/এনডিএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।