‘সিজারিয়ান ডেলিভারির হার মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ২৭ মে ২০১৮

এক হাজার মায়ের মধ্যে ১৫ জনের সিজারিয়ান ডেলিভারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্য হার হলেও বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালের এই হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এ উপলক্ষে আজ (রোববার) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘সিজারিয়ান ডেলিভারির এই হার মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক। অপ্রয়োজনে সিজার মায়ের জন্য ক্ষতিকর।’

প্রতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এখন এটা (প্রতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার) ৪২ শতাংশ, এই হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া দরকার। ক্লিনিক বা হাসপাতালে যদি ডেলিভারি না হয়, বাসা-বাড়িতে হয় যেখানে প্রশিক্ষত নার্স বা মিডওয়াইফ থাকে না। সেজন্য মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’

প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রপচারের অভিযোগ রয়েছে। এটা কমানোর কী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই কথাটা সঠিক। আমাদের দেশে সি-সেকশন (সিজারিয়ান ডেলিভারি) অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্য হার হচ্ছে প্রতি হাজারে ১৫ জন। সরকারি হাসপাতালে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হয়। টার্শিয়ারি লেভেলে হাসপাতালেও হয়ে থাকে। জটিল কেসগুলো আসে বলে ওটা (সিজারিয়ান ডেলিভারি) একটু বেড়ে যায়। ইদানিং কিছু পরিসংখ্যান পেয়েছি বেসরকারি হাসপাতালে ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত সিজারিয়ান ডেলিভারি করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এটা কমানোর জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি, এখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি ফর্ম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, চেকলিস্ট। সেই ফর্মে বিভিন্ন ধরণের রিকয়্যারমেন্ট আছে। সেটা ফিলাপ করে আমাদের দিতে হবে। রোগীর টোটাল তথ্যটা- কেন, কী কী কারণে তাকে সিজার করা হল, পরিবারের অনুমোদন নেয়া হয়েছে কি না, এটার জটিলতা ছিল কি না। বিভিন্ন ধরণের কমেন্ট ওখানে আছে, এটা আমাদের কাছে আসবে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া করলেও সেটা ওখানে পড়ে যাবে। অযথা সিজার না করার জন্য সবাইকে আমাদের বলা আছে।’

‘দুই মাস হল হাসপাতালগুলোতে ফর্ম দেয়া হচ্ছে, আমরা এখন ফিডব্যাক করছি। ফর্ম ফিলাপ হয়ে আসার পর আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল থাকবে, তারা ওটা দেখবেন। দেখার পর কোথাও গাফিলতি পাওয়া গেলে অবশ্যই যে শাস্তি বিধানে আছে, তা দেব। যে প্রতিষ্ঠান এই কাজ করবে তাদের জরিমানা ও বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যায় কাজ করলে তো ছেড়ে দেয়া হবে না।’

দেশে সিজরিয়ানের বর্তমান হার নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য উদ্বেগজনক মনে করেন কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য কিছুটা তো উদ্বেগজনক বটেই। আমাদের কখনই কাম্য নয় ৭০/৮০ শতাংশ সিজার হোক। যেখানে অ্যাকসেপ্টট্যাবল লিমিট হল ১৫ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘অপ্রয়োজনে সিজার করা হলে সেই মায়ের তো ক্ষতি হল। তাদের দুর্বল করে দিলেন। মিডওয়াইফ তৈরি করতে পারলে সিজার কমে যাবে। কারণ ডাক্তারের মাধ্যমে ডেলিভারি করলে তিনি সময় দিতে পারেন না। একটি ডেট দিয়ে ডাক্তার একটি হাসপাতালে যায়, সেখানে মায়েরা অপেক্ষা করেন, সিজার করে চলে আসেন। মিডয়াইফ থাকলে তিনি সময় দেবেন, ডেলিভারিতে তো সময় লাগে।’

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ফয়েজ আহম্মদসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।