সফল ভিসির হাসিমুখে বিদায়

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৩৮ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৮

বৃহস্পতিবার, দুপুর সাড়ে ১২টা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খানের কক্ষে টেবিলের সামনে গণমাধ্যম নেতাকর্মীদের জটলা। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফএফজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইনে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সকলেই ভিসিকে বিদায় জানাতে এসেছেন।

ভিসি হিসেবে তিন বছরের মেয়াদকাল পূর্ণ করার পর শুক্রবার (২৩ মার্চ) এ পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। সাবেক অন্য ভিসিরা কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে হঠাৎ করে, আবার কেউ অভিমান করে নীরবে নিভৃতে বিদায় নিলেও অধ্যাপক কামরুল হাসান এই প্রথমবারের মতো গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে আমন্ত্রণ জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। মূলত অনুষ্ঠানটি নীচ তলায় আয়োজন করা হলেও গণমাধ্যম বান্ধব ভিসি হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের কক্ষে অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা স্মৃতিচারণ চলতে থাকে। ভিসি কামরুল হাসান খান পেশাজীবী পরিষদের নেতা হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকায় বহু সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। অতীতের পরিচয়ের সূত্র ধরে আজ ভিসি হিসেবে বিদায়ের প্রাক্কালে তিনি হাসিমুখে সেই সব স্মৃতিচারণ করছিলেন। ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত তিন বছর যে কক্ষটিতে তিনি বসতেন সে কক্ষের চারপাশে অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন। তার টেবিলের চারপাশে বড় আকারের ফ্রেমবন্দি বেশকিছু ছবি (যাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানসহ পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে তোলা) দেখা যায়।

আলাপের এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিক নেতা ও অন্যদের নিয়ে নীচ তলার হলরুমে যান। আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রোভিসি, রেজিষ্ট্রার ও সিনিয়র অধ্যাপকদের কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বক্তৃতার শুরুতে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান তাকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে (চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা) পরিণত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

ভিসি বলেন, বিএসএমএমইউ এখন বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসাসেবার আশা ভরসা ও আস্থার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোরে প্রতিদিন এক হাজার রোগী সেবা নিচ্ছেন। সিটিস্ক্যানসহ রোগীদের সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যমান দূনীর্তি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষায় ৬টি ও নার্সিংয়ের ৪টি ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি, এমএস, এমপিএইচ, এমফিল ও ডিপ্লোমাসহ ৯৫টি পোষ্ট গ্রাজুয়েট কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৬২টি রেসিডেন্সি কোর্স। রেসিডেন্সি কোর্সের বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়নরত বেসরকারি শিক্ষার্থীদের সম্মানি ভাতা ২০ হাজার টাকা করা হয়।

শিক্ষা ও গবেষণায় সাফল্যসহ বহুমুখী কর্মকাণ্ডের ফলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস ও স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ পরিচালিত জরিপে বিশ্ব সেরার তালিকায় বিএসএমএমইউ ৬৪০তম স্থান করে নেয়। ওই জরিপে বাংলাদেশের ১১টি নেতৃত্বস্থানীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫ম স্থান অধিকার করে। গত তিন বছরে সহস্রাধিক গবেষণা কর্ম সম্পন্ন হয়। তিনি চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা, রোগীদের সঙ্গে নার্সদের হাসিমুখে কথা বলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন ও ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসার জন্য পৃথক সেল চালু করেন। প্রধানমন্ত্রী তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতা ও অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীরা অধ্যাপক কামরুল হাসানের ভিসি হিসেবে মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণায় দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

তবে ভিসি হিসেবে দায়িত্বকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি বিভাগ খুলতে চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা পারেননি। খুব শিগগিরই জরুরি বিভাগ চালু হবে। তিনি তার স্থলাভিষিক্ত ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

এমইউ/ওআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।