রাত পোহালেই ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন পূরণের দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলা সংলগ্ন একটি বিশাল সাইনবোর্ডের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলে দাঁড়িয়েছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী। উঁকিঝুঁকি মেরে সাইনবোর্ডে চোখ বুলিয়ে তিনি মোবাইলে কারও রোল নম্বর জিজ্ঞাসা করছিলেন। ভালো করে সিট প্ল্যান দেখে কলাভবনের দোতলায় সিট পড়েছে বলে নিশ্চিত হন তিনি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওই গৃহবধূ জানান, ছোটবেলা থেকে তার মেয়ের ডাক্তারি পড়ার শখ। শুক্রবার মেডিকেল পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। পরীক্ষা দিতে এসে সিট খুঁজে পেতে যেন ঝামেলা না হয় সে জন্য আগে থেকেই সিট প্লান দেখতে এসেছেন। মেয়েটার ডাক্তারি পড়ার স্বপ্নপূরণ হয় সে জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা রাত পোহালেই আগামীকাল (শুক্রবার) সকালে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সরকারি ২০ মেডিকেল কলেজের ৩৪টি কেন্দ্রে ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এরইমধ্যে পরীক্ষা গ্রহণের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা.মো.আবদুর রশীদ বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালদের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তুলে দেয়া হয়। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ট্র্যাংকে প্রশ্নপত্র ঢুকিয়ে সিলগালা করা হয়। এরইমধ্যে ঢাকার বাইরের বেশ কিছু মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালরা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশি প্রহরায় গন্তব্যে পৌঁছে রাতে প্রশ্নপত্র ট্রেজারিতে রেখেছেন। সকালে ট্রেজারিতে থেকে তারা প্রশ্নপত্র হলে নিয়ে যাবেন। সুষ্ঠুভাবে প্রশ্নপত্র বিতরণের জন্য সারাদিন বিএম এ, বিএমডিসি বর্তমান ও সাবেক সভাপতিসহ স্বাস্থ্য সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে এসে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ট্রেকিং ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রবহনকারী প্রতিটি গাড়ির গতিবিধি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা দেখতে শতাধিক সদস্যের পরিদর্শক টিম গঠন করা হয়। এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের দিয়ে গঠিত ওভারসাইট কমিটির সদস্যরা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মোট ৮২ হাজার ৮৫৬ পরীক্ষার্থী শুক্রবার ২০টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ৩৪টি ভেন্যুতে এক হাজারের বেশি হলে পরীক্ষা দেবেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নয় হাজার ৯৯৯ জন, স্যার সলিমুল্লাহ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও ময়মনসিংহে সাত হাজার করে, চট্টগ্রামে ছয় হাজার ৭৬ জন, রাজশাহীতে ছয় হাজার ১৪৪, সিলেট এম এ জি ওসমানীতে দুই হাজার ৮১৮, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে এক হাজার ৭৬০, রংপুরে চার হাজার ৮১১, কুমিল্লায় চার হাজার ৬৫, খুলনায় সাড়ে তিন হাজার, বগুড়ায় তিন হাজার ৬৩৩, ফরিদপুরে এক হাজার ৫২৮, দিনাজপুরে এক হাজার ৩৩৭, পাবনায় এক হাজার ৪৯৯, কিশোরগঞ্জে ৮১৯, গোপালগঞ্জে ৮৬৮, গাজীপুরে দুই হাজার, মুগদায় পাঁচ হাজার ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজে ছয় হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন।
এমইউ/একে/বিএ