দেহের গৌরব মুহূর্তেই ভেঙে দিল চিকুনগুনিয়া

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৭

বেঁচে থাকার সবকিছুই যখন প্রতিকূলে, তখন শরীর আপনা থেকেই প্রতিরোধের বেষ্টনি গড়ে তোলে। পানিদূষণ, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ আর বিষেভরা খাবার নিয়েই রাজধানী ঢাকার জীবন। মরণঘাতী সব আয়োজনের মধ্যেও প্রকৃতি আগলে রেখেছে এ শহরের কোটি প্রাণকে।

শেষ কবে শরীর খারাপ হয়েছিল, তা মনে ছিল না। শরীর খারাপ বলতে কয়েক দিনের জন্য জ্বর হতো বছর তিনেক আগে। ঘাম আর ঝাঁকুনি দিয়ে আসা জ্বরের ধকল সইতে হয়েছে বেশ জোরেসোরেই। কয়েক বছর হলো সে জ্বরের যন্ত্রণাও উবে গেছে। 

মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেটের সমস্যা, জ্বর, সর্দি, কাঁশি কোনো কিছুই শরীরে দানা বাঁধতে পারেনি এ সময়ে। রাতে ঘরে থাকা হয় খুব কমই সময়। ঝড় কী বৃষ্টি, শীত কী গ্রীষ্ম, প্রতি রজনী-ই কাটে কোনো না কোনো আড্ডাসম জলসায়।

অপ্রতিরোধ্য শরীরের এ গতি নিয়ে ঈর্ষা হতো মনে মনে। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বৈঠকে-গানের আসর রেখে ঘরে শুয়ে রাতযাপন যেন পুঞ্জিকা থেকে উঠেই গিয়েছিল। সুস্থ-সবল মন আর শরীরের এমন বেয়ারা চলাফেরায় ঈর্ষা করত বন্ধুরাও।

এক রাতের যাতনাতেই সব শেষ। নিমিষেই ভেঙে-মুচড়ে গেল শরীরের সব গৌরব। চিকুনগুনিয়া! এ যেন সাক্ষাৎ জমের দেখা। শরীরের সব ক্রিয়া যার কাছে নিষ্ক্রিয়। তিলে তিলে গড়ে তোলা শরীরের সব শক্তি মুহূর্তেই যেন ভেঙে খান খান চিকুনগুনিয়ার পরশে।

শরীরে খানিক টান ছিল বলে সেদিন রাতের মধ্যভাগেই বিছানায় যাওয়া। ঘুমের তালে রাতে চিকুনগুনিয়ার টান অনুভূব হয়নি। বেতাল ঘটে সকালে বিছানা থেকে উঠে পা ফেলতে গিয়ে। ডান পা মেঝেতে রাখতেই ব্যথায় কুকড়ে উঠলাম। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ব্যথায় টানটান করছে। ভাবলাম মোটরবাইকে করা দুর্ঘটনায় পুরনো ব্যথা ভেসে উঠেছে হয়তো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে অফিসে আসলাম। আমার খুঁড়িয়ে হাঁটা দেখে অফিস সহকর্মীরা বাতলে দিলেন চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ। বুঝতে আর বাকি রইল না।

বাসায় ফিরেই প্রায় অচেতন। ঘাম নেই, কাঁপুনি নেই অথচ জ্বরে ভেতর-বাহির যেন ফেটে যাচ্ছে। উত্তপ্ত শরীরে ডিম ভেঙে রাখলে মুহূর্তেই যেন ভেজে মচমচে হয়ে যাবে। জ্বরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকল হাত-পায়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, বমি, খাবারে অরুচি। আহা চিকুনগুনিয়া! কি নেই তার পরশে! ভাগ্যিস এক বন্ধু আর দুই ভাগ্নির অকৃত্রিম সেবা-শুশ্রূষা ছিল। নইলে এক মশার কামড়েই সাঙ্গ হত জীবনপ্রদীপ।

গেল ১০ দিনে একেবারেই নাজেহাল বানিয়ে চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস অনেকটা পরাস্ত। কিন্তু যে ব্যথা আর চুলকানি অঙ্গজুড়ে ছড়িয়েছে, তাতে সহসাই চিকুনগুনিয়ার আশীর্বাদ মুক্তি মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।

এএসএস/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।