বেওয়ারিশ লাশ দাফনেও ‘প্রকৃতির বাগড়া’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:২৭ এএম, ১২ জুলাই ২০১৭

‘কয়টা ডেড বডি রেডি করছো। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে কবরস্থান পানিতে সয়লাব হইয়া গেছে। কবর খোঁড়া যাচ্ছে না। বডি যত কম আনা যায় সেই চেষ্টা কইরো।’

মঙ্গলবার দুপুর ২টায় জুরাইন কবরস্থান থেকে এক কর্মকর্তা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ক্যারিয়ার (যারা লাশ বহন করেন) দলনেতা শফিকুল ইসলাম এমিলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এসব কথা বলছিলেন।

ওপাশ থেকে এমিলকে বলতে শোনা যায়, ‘আজ তো মোট ২৭টা লাশ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। ১০টা লাশ প্যাকেট করছি। মর্গ এলাকায়ও তো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তাইলে আইজ ওই ১০টাই নিয়া আসি। বাকিগুলো পরদিন নিয়া যামু, কি কন।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মরচুয়েরি অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকান্দারও এমিলের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন।

তিনি আপাতত ১০টি লাশ নিলেও বুধবার বাকি ১৭টা ও এরপর আরও ২০/২২টা বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সিকান্দার জানান, ঈদের পর থেকে মৃত নবজাতকসহ অর্ধশত বেওয়ারিশ লাশ মর্গে পড়ে আছে। আগে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম চার/পাঁচদিন পর পর লাশ নিয়ে দাফন-কাফন করলেও ঈদের পর থেকে কোনো লাশ নেয়নি। মর্গের পাঁচটি মরচুয়েরি কুলারের তিনটিই নষ্ট থাকায় লাশগুলো বাইরে রাখায় তা পঁচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

আঞ্জুমানের ক্যারিয়ার দলনেতা এমিল জানান, বৃষ্টির কারণে জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ লাশ দাফনের জন্য কবর খুঁড়তে না পারায় লাশ নিতে চাইছে না। কবর খুঁড়তে গিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকটি কোঁপ দিলেই পানি উঠে যায়। আজও (মঙ্গলবার) ২৭টি লাশ নেয়ার কথা থাকলেও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে সবগুলো নেওয়া যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, প্রচণ্ডে দুর্গন্ধে চিকিৎসক, নার্স, রোগী ও তাদের স্বজনরাসহ সবাই নাকে-মুখে রুমাল চেপে চলাফেরা করছেন।

এ সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক নিরাপত্তারক্ষীদের ডেকে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাকে দুর্গন্ধের উৎসস্থল খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। অন্যথায় এমন দুর্গন্ধময় পরিবেশে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না বলেও তাকে বলতে শোনা যায়।

এর পরপরই একাধিক নিরাপত্তারক্ষী দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে থাকেন। পরে দেখা যায় হাসপাতালের মর্গের সামনে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কর্মীরা চারটি বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে যেতে কাজ করছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ লাশগুলো মর্গে পড়ে থেকে পঁচে-গলে গেছে। দাফনের জন্য লাশগুলো বের করতে গিয়েই চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের একজন ক্যারিয়ার জাগো নিউজকে জানান, তারা রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেন। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে কবরস্থানে পানি জমে থাকায় লাশ দাফন করা সম্ভব হচ্ছে না। কবরস্থান কর্তৃপক্ষও লাশগুলো নিতে চাচ্ছে না। এ কারণে ঈদের পর ঢামেক হাসপাতাল ও কলেজ মর্গ থেকে বেওয়ারিশ কোনো লাশ দাফনের জন্য নেওয়া হয়নি। ঢামেক কর্তৃপক্ষের বার বার তাগাদা ও জুরাইন কবরস্থান কর্তৃপক্ষ রাজি হওয়ায় আজ লাশ নিতে এসেছেন।

বেওয়ারিশ লাশগুলো কিভাবে দাফন হয়, দাফনের আগে জানাজা হয় কিনা কিংবা একই কবরে একাধিক লাশ মাটিচাপা দেওয়ার প্রচলিত ধারণা কতটুকু সত্যি জানতে চাইলে আঞ্জুমানের ক্যারিয়ার এমিল জানান, সাধারণ লাশের মতোই কাফনের কাপড় পড়িয়ে ও জানাজা দিয়ে পৃথক কবরে লাশ স্বাভাবিকভাবে দাফন করা হয়।

এমইউ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।