ট্রলি সংকট ঢামেকের জরুরি বিভাগে!
‘ভাই, তাড়াতাড়ি একটা ট্রলি দেন। ভারি মানুষ, শরীর একদম ছাইড়া দিছে। আমি ধইরা রাখতে পারছি না। প্লিজ কেউ একটা ট্রলি দেন।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে রিকশার ওপর বসে এক ভদ্রলোক এভাবে রোগী বহনের জন্য ট্রলির খোঁজ করছিলেন। ভদ্রলোক যে রোগীকে রিকশায় ধরে বসে আছেন তিনি নড়াচড়া করছিলেন।
এ দৃশ্য দেখে ভয়ে পাশে দাঁড়ানো ওই রোগীর স্ত্রী আল্লাহ আল্লাহ করো বলে মৃদু সুরে দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। মহিলার পাশ থেকে দৌড়ে এক তরুণ জরুরি বিভাগের ভেতরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ট্রলি পেলেন না। ট্রলি খোঁজে না পেয়ে শেষে দুই তিনজন লোক রোগীকে ধরে জরুরি বিভাগের ডাক্তারের কক্ষের পাশের একটি স্ট্রেচারে নামিয়ে রাখেন।
ঢামেক জরুরি বিভাগের এ দৃশ্য আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওই তরুণ জানান, রোগী তার বাবা নাম আবদুল মোমেন। বাসা পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জে। হঠাৎ প্র্রেসার উঠে চোখ উল্টে গেলে দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছেন। এখানে ট্রলি না পেয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে বলে জানালেন।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত নার্সদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, অন্যান্য সময় জরুরি বিভাগের গেটে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলি থাকে। আজ রোগীরা সব ট্রলি ভেতরে নিয়ে গেছে কিনা ঠিক বুঝতে পারছি না।
জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত তথ্য কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা আজ কম। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেনারেল, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও পেডিয়েট্রিকসসহ ১২৫ জন ও পুলিশি মামলার ৩২ জনসহ মোট ১৫৭ জন ভর্তি হয়। তবে এ সময়ে ভর্তিসহ মোট সাত শতাধিক প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। অন্যান্য দিন এ সময়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই-তিনগুণ থাকে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ব্যস্ততম ঢামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ফাঁকা আজ। ঈদকে সামনে রেখে মুুমূর্ষু কিংবা জটিল রোগী না হলে ডাক্তার ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। রোগীরা স্বেচ্ছায়ও কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে ঈদ করতে যাচ্ছেন।
জরুরি বিভাগের পাশে এক্সরে কক্ষটিতে একজন আনসার সদস্য এক্সরের কাগজ দেখে ভেতরে ঢুকাচ্ছেন। জরুরি বললেও ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে বলছেন, ভেতরে আরও অনেক রোগী আছে।
জরুরি বিভাগের পাশে একটি স্ট্রেচারে এক বৃদ্ধা শুইয়ে আছেন। পাশে দুই নারী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয় ওই দুই নারীকে নাকের ফুল খুলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৭, লালবাগ রোডের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা মানসিক রোগে ভুগছিলেন। আজ দুপুরে বাড়ির তিন তলায় স্বামীর লুঙ্গি শুকাতে দিতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আহত হন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জাগো নিউজের এ প্র্রতিবেদক ঢামেক জরুরি বিভাগে মিনিট বিশেক অবস্থানকালে এ অবস্থা দেখতে পান।
এমইউ/এআরএস/এমএস