এখনও ৩০০ টাকা ফি’তে রোগী দেখেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ


প্রকাশিত: ১০:২৯ এএম, ০৩ জুন ২০১৭

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের তিন তিনবারের নির্বাচিত ডিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত এ চিকিৎসকের নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করেন সিনিয়র-জুনিয়র হাজারও চিকিৎসক।

অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও তার চালচলন, কথাবার্তা ও পোশাক-পরিচ্ছেদ অতি সাধারণ এক মানবদরদী চিকিৎসকের প্রতিমূর্তি।

অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহর লিখিত পুস্তক ৪১টি দেশের মেডিকেলে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। দেশি-বিদেশি নামিদামি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বহু চিকিৎসক তার সরাসরি ছাত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট যেখানে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার ফি কমপক্ষে ৫০০ টাকা নেন, যেখানে সিনিয়র অধ্যাপকদের কেউ কেউ নেন এক থেকে দেড় হাজার টাকা, সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।

দেশসেরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হয়ে তিনি এখনও মাত্র ৩০০ টাকায় রোগী দেখেন। নামমাত্র ফি নিয়েও রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তবেই ওষুধ লেখেন। অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এ চিকিৎসক রোগীর নাড়ি টিপেই বলে দিতে পারেন সম্ভাব্য রোগের কথা।

সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএমএ) দেশের চিকিৎসক সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

ডা. আবদুল্লাহর ছেলে ডা. সাদি আবদুল্লাহ মামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে যা লেখেন তা থেকেও এ চিকিৎসক সম্পর্কে জানা যায়।

তিনি (ডা. সাদি) লেখেন , ‘আল্লাহর অশেষ রহমতে তোমাকে যা দিয়েছে তাতে তুমি চাইলে অনেকে কিছু করতে পারতা। কিন্তু সেই ৯০০ টাকার বাটা স্যান্ডেল আর ইন ছাড়া হাফ শার্ট পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কিংবা চেম্বারে যাওয়ার এই ছিল তোমার ড্রেস। জীবনে একটা মাত্র ব্লেজার বানালা তাও সাবাহর বিয়ের সময়। এই ৩০০ টাকার ভিজিট থেকে মিনিমাম ৫০০ টাকা করতে কতো রাগ দেখালাম। আর তখনই কৌশলে প্রসঙ্গ অ্যাভোয়েড করতা। শুধু নেক্সট জেনারেশনের ডাক্তাররা যাতে উপকৃত হয় তাদের বই লেখার জন্য চেম্বার থেকে এসে এক গাদা টেক্সট বই নিয়ে বসে কতো কষ্ট করেছ আমি জানি। তাতে দেশ ও জাতির উপকার হবে- এই ছিল তোমার ধ্যান। খুব শর্টে এই তুমি সবার প্রফেসর আবদুল্লাহ স্যার, আমার চির লোভহীন, চির সাধারণ বাবা। মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা তোমার জন্য। তোমার স্টুডেন্টরা তোমাকে পিতার মত ভালোবাসে। আল্লাহর রহমতে তুমি একুশে পদক পেয়েছ। দেশের খুব নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষজন আল্লাহর হুকুমে তোমার ট্রিটমেন্টে সুস্থ হচ্ছে। দেশের প্রতিটা প্রান্তে আল্লাহ তোমার সুনাম ছড়িয়ে দিয়েছে। এই দেশও তোমাকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু দেশের কতিপয় মানুষ আজ না বুঝে তোমাকে বিনা কারণে হেয় করল।’

বিএমএ’র শীর্ষ নেতাদের অনুরোধে তিনি আপাতত রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চেম্বারে এখন আর রোগী দেখছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠিকানা বদল করে তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৩১২ নম্বর কক্ষে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন।

রোগী দেখার ফি’তে পরিবর্তন হয়েছে কিনা- জানতে শনিবার দুপুরে ডা. আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, আগের মতো ৩০০ টাকা ফি’তেই রোগী দেখছেন তিনি।

এমইউ/এএইচ/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।