কম দামে রিং পেয়ে রোগীরা খুশি
বোস্টন সায়েন্টিফিক নামে একটি কোম্পানির আমদানি করা ‘প্রমাস’ হার্টের রিং কিছুদিন আগেও এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। রোগীর অভিভাবকরা সমুদয় অর্থ বিনাবাক্যে পরিশোধ করতেন।
স্বজনের প্রাণ বাঁচাতে কেউ জমি বিক্রি, কেউ স্ত্রীর শখের গয়না বিক্রি কেউবা সারাজীবনের উপার্জিত অর্থ হার্টের রিং কেনার জন্য খরচ করেছেন। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না এক শ্রেণির মুনাফালোভী আমদানিকারক, হাসপাতালের মালিক ও চিকিৎসকরা এক একটি হার্টের রিং লাগিয়ে কী পরিমাণ মুনাফা করেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোববার হার্টের রিং জনৈক এক রোগীর দেহে লাগান হয়েছে মাত্র ৮৪ হাজার টাকায়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের হার্টের রিংয়ের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেয়ায় রিংপ্রতি এর দাম কমেছে ৩৯ হাজার টাকা। কম দামে হার্টের রিং লাগাতে পেরে রোগীরা খুব খুশি এবং সন্তুষ্ট তাদের পরিবারও।
বর্তমানে কোম্পানিগুলোর হার্টের রিংয়ের প্যাকেটে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে ড্রাগ রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ডিএআর), হার্টের রিংয়ের নাম, সাইজ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, এমআরপি এবং কোন কোম্পানি এটি আমদানি করেছে তা প্যাকেটের গায়ে লেখা রয়েছে। ফলে আগের মতো ইচ্ছামাফিক বেশি দামে হার্টের রিং বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র চিকিৎসক জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, মরণাপন্ন হৃদরোগের সুচিকিৎসার নামে গত কয়েক বছর ধরে আমদানিকারক কোম্পানি, হাসপাতালের মালিক ও হৃদরোগ চিকিৎসকরা অপবাণিজ্য করেছেন। রোগীদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে তথাকথিত কর্পোরেট নামধারি হাসপাতালগুলো গলাকাটা বাণিজ্য করেছে।
বর্তমানে দেশে প্রতি বছর ১৮ হাজার হার্টের রিং প্রতিস্থাপিত হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাসপাতালভেদে একই কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে হার্টের রিংয়ের যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারণে গঠিত ২০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি যাচাই-বাছাইসাপেক্ষে ১৫টি আমদানিকারক কোম্পানিকে ৩৭ প্রকারের হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বর্তমানে দেশে ২১টি কোম্পানি ৪৭ প্রকারের বিভিন্ন সাইজের রিং আমদানি করছে।
মূল্য নির্ধারণে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব সালাহউদ্দিন আহম্মদ জানান, এখন থেকে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিটি রিং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্স নম্বর, মার্কেটিং রিটেইল প্রাইজ (এমআরপি), উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ১১টি কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের হার্টের রিংয়ের মূল্য তালিকা পাওয়া গেছে। কোম্পানিগুলো হলো- মেসার্স এশিয়া প্যাসিফিক মেডিকেল লিমিটেড, মেসার্স ইউনিমেড লিমিটেড, মেসার্স লাইফ লাইন ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ভাসটেক লিমিটেড, মেসার্স গ্লোবাল কর্পোরেশন, মেসার্স ওরিয়েন্ট এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লিমিটেড, মেসার্স মেডিগ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড, মেসার্স অ্যাডভ্যান্সড মেডিটেক, মেসার্স বায়োভাসকুলার লিমিটেড ও মেসার্স ওমেগা লিমিটেড।
হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, অধিকাংশ হার্টের রিংয়ের দাম কমেছে। তবে দাম কমলেও রোগীর সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে।
এমইউ/জেএইচ/এমএআর/এমএস