ভিসি প্রো-ভিসির দ্বন্দ্বে অস্থিতিশীল বিএসএমএমইউ


প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭
ফাইল ছবি

ভিসি ও প্রো-ভিসির দ্বন্দ্বে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিএসএমএমইউর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের অফিস কক্ষে ভিসি ও প্রক্টর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের  ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে ডা. স্বপনের অনুসারী জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রক্টর হাবিবুর রহমান দুলালকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অপচেষ্টা ও তার অফিস কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভিসি ও প্রো-ভিসির সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শাহবাগ থানা পুলিশ ছুটে যায়।

বিএসএমএমইউর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ভিসি ও প্রো-ভিসির দ্বন্দ্বে বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে।

ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, তিনি বা প্রক্টর কেউ তাকে লাঞ্ছিত করেনি বরং সে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। একজন অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও প্রক্টরকে তার (ভিসির) কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকিকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এ সময় তিনিসহ উপস্থিত অন্যরা দুজনকে শান্ত করেন। কিন্তু তারপরও জাকারিয়া স্বপন তাকে মারধর করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে তার অনুসারীদের উত্তেজিত করে। একপর্যায়ে তারা প্রক্টরের অফিসের দরজায় লাথি মারে। পরে বটতলার সামনে জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রক্টরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জাকারিয়া স্বপনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না করা গেলেও স্বাচিপের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, ভিসি নিজে ও প্রক্টর তার গায়ে হাত তুলেছেন।

নেপথ্যে কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিসি ও প্রো-ভিসির মধ্যে ঠান্ডা লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। জাকারিয়া স্বপন যেদিন যোগদান করেন তার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়কে কম্পিউটারাইজড করার জন্য পাঁচ কোটি টাকার একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। পদাধিকারবলে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ক্রয় কমিটির প্রধান হলেও এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। এ নিয়ে ওই সময় দুজনের মধ্যে প্রথম কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে বিএসএমএমইউর ক্যান্সার বিভাগে সিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন কেনা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অর্থ লোটপাট করছেন এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি ভিসি নিজে করিয়েছে বলে ঘনিষ্ঠদের কাছে অভিযোগ তোলেন প্রো-ভিসি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।

সম্প্রতি বিএসএমএমইউতে দুই শতাধিক নার্সের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় ভিসির নিজের এলাকা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের প্রার্থীদের বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ভিসির অনুসারীরা নার্স নিয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে ভিসি এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করেন।

ডা. জাকারিয়া স্বপনের ঘনিষ্ঠরা জানান, ভিসি আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে আরেক প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের কক্ষে ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও রেজিস্ট্রারকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন বলে বুধবার রাতে জানান। সে অনুযায়ী সকাল থেকে জাকারিয়া স্বপন আরেক প্রো-ভিসি শারফুদ্দিনের কক্ষে অপেক্ষা করেন। কিন্তু ভিসি ওই কক্ষে না এসে তার অফিস কক্ষে ডেকে পাঠান। ওই কক্ষে গিয়ে জাকারিয়া স্বপন পাঁচজনের বাইরে অনেককে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রক্টর হাবিবুর রহমান দুলাল মিটিংয়ে থাকলে তিনি থাকবেন না বলে জানান। এতে প্রক্টর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গালিগালাজ ও গায়ে হাত তোলেন।

এ সময় জাকারিয়া স্বপন ভিসির পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভিসিও তার গায়ে হাত তোলে বলে ঘনিষ্ঠদের জানান জাকারিয়া।

তবে ভিসি জানান, গত রাতে তিনি প্রো-ভিসি প্রশাসনের কক্ষে কোনো সভা ডাকেননি। নিত্যদিনের মতো আজ সকালে বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসিত্রয়, পরিচালক (হাসপাতাল), রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও অন্যান্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

তিনি জানান, বুধবার নার্স নিয়োগের ভাইভা শেষ হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি সবাইকে ডেকেছিলেন। কিন্তু জাকারিয়া স্বপন বৈঠকে এসে অশোভন ভঙ্গিতে কথাবার্তা শুরু করেন। বৈঠকে আসার আগে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ডেকে একজন অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে ১০ মিনিটের মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দেন। তার কক্ষে এসেও তিনি নার্স নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে ওই অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জড়িত বলে অভিযোগ করে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবি জানান।

ওই সময় ভিসি দুপুর সাড়ে ১২টায় আবার মিটিংয়ে বসবেন বলে জানান। ওই মিটিংয়ে প্রক্টর থাকতে পারবে না বললে প্রক্টর ও প্রো-ভিসির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।

ভিসি জানান, এ সময় তিনি জাকারিয়া স্বপনকে উত্তেজিত না হয়ে কথা বলতে অনুরোধ জানান ও সবাই মিলে তাকে শান্ত করেন। কিন্তু সে বাইরে গিয়ে দলবল ভারি করে প্রক্টরকে তার অনুসারী জুনিয়র চিকিৎসককে দিয়ে গালিগালাজ করায়। ভিসির দাবি, তিনি দুই বছর ধরে ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের গতিধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।