অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে শতভাগ সাফল্যের নজির ঢামেক হাসপাতালের


প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ০৫ জুন ২০১৬

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের হেমোটোলজি বিভাগে দুই বছর আগে স্থাপিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টটেশন ইউনিট অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে শতভাগ সাফল্যের নজির সৃষ্টি করেছে। এ সময়ে ইউনিটটিতে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত ২১ জন রোগীর  দেহে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়।

ঢামেক হাসপাতাল তথা দেশের জন্য সুখবর হলো ২১ জন রোগীর সকলেই এখনও সুস্থ রয়েছেন। এ ধরনের প্রতিস্থাপনে উন্নত বিশ্বেও শতকরা একভাগ রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি থাকলেও ঢামেক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন ইউনিটে কোন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।  

ঢামেক হাসপাতালের হেমোটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ খান জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) সহযোগিতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও নার্স ও সহযোগী স্টাফদের মাধ্যমে বিশ্বমান বজায় রেখে বিশেষ সতর্কতা অনুসরণ করে রোগীদের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, অপেক্ষাকৃত কম খরচে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে অটোলগাস পদ্ধতিতে ( রোগীর শরীর থেকে অস্থিমজ্জা নিয়ে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন) অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এ বছরের শেষে ডোনারের বোনম্যারো সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপনের এলোজেনিক পদ্ধতিতেও প্রতিস্থাপন শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে হেমাটোলজি বিভাগের উদ্যোগে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন : সাফল্যের দুই বছর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এম এ খান তিনি এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মিজানুর রহমান, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) এর ডা. বিমলাংশু দে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, ঢামেক ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম, সহকারি পরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর, নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকাদার প্রমুখ।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর ঢামেক হাসপাতাল ২ এর দশম তলায় এ ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়। যাবতীয় প্রস্তুতি শেষে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ প্রথম বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যানটেশন করা হয়। গত দুই বছরে ২১ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে দুরারোগ্য ব্যাধি বোনম্যারো ট্যান্সপ্লানটেশন অস্ত্রোপচারসহ বিশ্বমানের চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যয় বহুল এ চিকিৎসা খরচ সরকারের একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা খরচ মেটাতে তিনি সমাজের বিত্তবানদের আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি ঢামেক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটের এ সফলতার প্রচারে মিডিয়াকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন কাজের সঙ্গে জড়িত তারা কাজে আরো বেশি অনুপ্রেরিত হবেন বলে মন্তব্য করেন।

তিনি এ ধরনের ইউনিট স্থাপনে সহায়তা করতে এগিয়ে আসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমজিএইচ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমজিএইচ হাসপাতালের বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ডা. বিমলাংশু দে বলেন, দেশে বিশ্বমানের একটি বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টটেশন ইউনিট গড়ে তোলার স্বপ্নে সহযোগিতা করে চলেছেন। এমজিএইচ হাসপাতালের অর্ধশতাধিক ডাক্তার নার্স একাধিকবার ঢাকায় এসে এ দেশের ডাক্তার নার্সদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলতা এসেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।